হাজী আব্দুল ওয়াহাব, পাকিস্তান
[২২ জানুয়ারি ২০১১, শনিবার, বাদ ফজর]
সব প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক রাসূল সা. এর ওপর। তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবাদের ওপর।
আমার ভাইয়েরা! দুনিয়ার জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত জীবনেই পরকালেরর প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। পরকালেরর জীবনের কোনো শেষ নেই। অনন্তকাল সেখানে থাকতে হবে। যদি কেউ জান্নাতী হয় তবে জান্নাতে থাকবে। আর যদি জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নামে থাকবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করতে হলে তিনভাবে মেহনত করতে হবে। এক. নিজের ওপর মেহনত করা। নিজের ঈমান ও আমল ঠিক করার জন্য মেহনত করা। অন্তর থেকে গায়রুল্লাহ বের করে দিয়ে আল্লাহর জাত ও সিফাতে বিশ্বাস বদ্ধমূল করা। দুই. পরিবারের ওপর মেহনত করা। পরিবারে যারা আছে তারাও যেন দীনদার হয়ে যায়।
দীন পালনের যোগ্যতা তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়ে যায়। তাদের মধ্যেও যেন আল্লাহর জাত ও সিফাতের বিশ্বাস চলে আসে। তারাও যেন আল্লাহর মানশা ও নির্দেশ পূরণ করতে পারে। রাসূল সা. পথ ও মত অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারে। তিন. সারা বিশ্বের মানুষের জন্য মেহনত করা। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেন ঈমানওয়ালা হয়ে যায়। ঈমানের ওপর চলে আসে, সে চেষ্টা করা। তারাও যেন এ কথা বিশ্বাস করে সবকিছু আল্লাহর থেকে হয়। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছু হয় না। সমস্ত মাখলুক শিলেও আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছু করতে পারে না। দুনিয়ার সমস্ত মানুষ যেন আল্লাহর হুকুম রাসূল সা. এর নির্দেশনা অনুযায়ী করতে পারে এই মেহনত করা।
আমার মুহতারাম ভাইয়েরা! আমাদের নবী কোনো স্থান বা কালের ছিলেন না। তিনি সারা আলমের জন্য। অন্যান্য নবী মারা যাওয়ার পর তার মিশন সমাপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের নবী শেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী আসবেন না। তাই তিনি চলে গেলেও তাঁর মিশন শেষ হয়নি। আমল শেষ হয়ে যায়নি আমাদের কাজ হয়তো এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। তবে আমাদের নিয়ত ও ফিকির হবে বিশ্ব নিয়ে। কারণ যার নিয়ত ও কর্তব্যবোধ যতো বড় হয় কাজের প্রতি তার গুরুত্ব ও গতি ততো বেশি হয়।
আমার ভাইয়েরা! দা‘য়ীর প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো নিজের ওপর মেহনত অব্যাহত রাখা। কারণ নিজের নিয়ত সহীহ তো আমল সহীহ। নিয়ত ও আমল যদি সহীহ হয় তবে আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনের পালবেন, আখেরাতে পালবেন। তিনি আমাদেরকে জান্নাত দান করবেন। নিজের ওপর মেহনত অব্যাহত রাখলে অন্যান্য মেহনতের পথ খুলে যাবে। আমার ভাইয়েরা! কোনো কাজ শুরু করলেই তার ফল পাওয়া যায়। রাসূল সা. বলেন, কোনো বাচ্চা যদি মক্তবে যাওয়া শুরু করলেই সমুদ্র, মাছ, গর্তের পিঁপড়া পর্যন্ত তার জন্য দুআ করতে থাকে। যখন সে কুরআন তেলাওয়াত শুরু করলো। তখন আল্লাহ তাকে ও তার পিতাকে সওয়াব দিতে শুরু করেন। এজন্য ভাই এখনি আমরা নিয়ত করে নেই। অনেক দেরি করে ফেলেছি। আর বিলম্ব করা যাবে না। আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো আমরা রাসূল সা. এর উম্মত। এটাই আমাদের বড় অর্জন। অন্য কোনো অর্জন থাকবে না। মানুষ কোনো কাজের প্রতি তখনি আগ্রহ বোধ করে যখন তা নিজের দায়িত্ব মনে করে। যখন তার ভেতর কাজের প্রতি আবেগ ও ভালোবাসা, তাড়া ও তাড়না থাকে। এ জন্য আমরা দুটি দুআ করবো। একটি মুসলমানের জন্য। যেন আল্লাহ সমস্ত মুসলমানকে কাজের দিকে ঝুঁকিয়ে দেন। কাজের বুঝ দান করেন। তারা যেন এ কাজকে নিজের কাজ মনে করে। কারণ কালেমা পড়নেওয়ালা সব মুসলমানের ওপর এ কাজের দায়িত্ব রয়েছে। অপরটি হচ্ছে অমুসলিমদের জন্য। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েতের ফায়সালা করেন। যখণ আমাদের চেষ্টা, মেহনত ও দুআ একত্রিত হলে আল্লাহ রাস্তা খুলে দিবেন। তিনি নিজে কাজের প্রশিক্ষণ দিবেন। কাজ করার জন্য যতো প্রকার যোগ্যতা প্রয়োজন তা দান করবন।
আমার ভাইয়েরা! নিয়ত করে নিই। কারণ নিয়তের একটি বরকত আছে। তার প্রতিদান আছে। একবার এক বুযুর্গ মরুভূমি পার হচ্ছিলেন। মরুভূমির বালু ও বালুর টিলা দেখে তাঁর নিজ এলাকার দুর্ভিক্ষের কথা মনে পড়লো। তিনি নিয়ত করলেন হে আল্লাহ! যদি এই বালুর টিলা যদি আটা হতো তবে আমি তা দান করে দিতাম। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সমপরিমাণ নেকি দান করে দিলেন। যদিও সে বালু আটা হয়নি। তিনি দানও করেননি। আমরা নিয়ত করে নিই এবং দুআ করতে থাকি। আবার দুআ করতে গিয়ে কোনো নিরাশ না হয়। দুআ করার পূর্বে ‘ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম’ পড়ে নিলে দুআ কবুল হয়। কেউ যদি দিনে পঁচিশবার ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি লিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত’ পড়লে আল্লাহর দরবারে তাঁর নাম মুস্তাবাতুদ দাওয়াত (যাদের দুআ নিশ্চিতভাবে কবুল হয়) হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। আমলের দ্বারাই মুমিনের জীবন সুন্দর হয়।
আমার মুহতারাম ভাই! আল্লাহ দাওয়াতের কাজ সহজ করে দিয়েছেন। যদি কোনো ব্যক্তি ইখলাসের সাথে কালেমা পড়ে তবে আল্লাহ তার জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দিবেন। আর নিষ্পাপ হয়ে বান্দা যখন দুআ করে তখন আল্লাহ তা কবুল করেন। একজন বান্দা যতক্ষণ আল্লাহর রাস্তায় থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তার সকল দুআ কবুল করতে থাকেন। কতো বড় লাভ! যদি কোনো বান্দা আল্লাহর বড়ত্বের কথা, শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলতে থাকে তখন আল্লাহ দিলে আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ বসিয়ে দেন। আল্লাহর বড়ত্ব তার অন্তরে স্থান করে নেয়। ফলে বান্দা আল্লাহর ইবাদতের জন্য অস্থির হয়ে যায়। বান্দা যখন আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাস নিয়ে ইবাদত করে তখন আল্লাহ খুশি হয়ে যান। তার দুনিয়া ও আখেলাতের জীবন সুন্দর করে দেন। তাকে জান্নাত দান করেন। আল্লাহ আমাদেরকে দাওয়াতের কাজে কবুল করুন। আমীন।
অনুলিখন :: আতাউর রহমান খসরু,ইসলামি বার্তা,২০১১-০৭
No comments:
Post a Comment