Monday, 3 September 2012

যেভাবে আমি সত্যকে পেলাম-৪

রেডিও তেহরান,মঙ্গলবার, ০৭ আগস্ট ২০১২

মার্কিন রমনী লিন্ডসি কোনিগের ইসলাম গ্রহণ

মার্কিন নওমুসলিম লিন্ডসি কোনিগের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করবো আজকের আলোচনা। তিনি বলেছেনঃ "ইসলামের প্রতি ইমান আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিস্ময়কর মুহূর্তটি ছিল আমার প্রতি আমার বাবার কৌতূহল।ধর্মের প্রতি তাঁর কোনো বিশ্বাস ছিল না।কিন্তু আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর আমার মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখে তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলেন। নিঃসন্দেহে এটা ছিল আল্লাহরই কাজ। কেননা আমার বাবার প্রতি এই যে অনুগ্রহ এটা অন্য কোনো কিছু কিংবা অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না।

২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম ভীতি ছড়ানোর প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এর কারণ হলো টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনোরকম তদন্ত বা পর্যালোচনা করা ছাড়াই মুসলমানদেরকে দায়ী করে। এভাবে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে প্রচারণা চালায় এমনকি সামরিক হামলা করতেও দ্বিধা করে নি। একটা অবাস্তব বিষয়কে তারা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে এতো বেশি প্রচারণা চালায় যে স্বয়ং পশ্চিমাদের মাঝেই ইসলাম বিষয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। এই কৌতূহল থেকে পাশ্চাত্যে ইসলাম এবং কোরআন সম্পর্কে জানার বা স্টাডি করার একটা জোয়ার আসে। ইউরোপ এবং আমেরিকার অধিকাংশ বই বিক্রেতাদের মাঝে কোরআন এবং ইসলামী সাহিত্য বিষয়ক বই বিক্রির হিড়িক লেগে যায়। ইসলাম বিষয়ক বই পুস্তক বিক্রি করে তারা ব্যাপক লাভবান হয়।

১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরপরই মার্কিনীদের অসম্ভবরকম ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণার কারণেই পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে ইন্টারনেটে ইসলাম বিষয়ক তথ্য খোঁজার ধুম লেগে যায়। ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমা পাঠকগণ পড়ালেখা করার পর ইসলামের ব্যাপারে বিদ্বেষী না হয়ে বরং তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে দেয়। ইসলাম সম্পর্কে গভীর উপলব্ধির কারণেই তাঁরা মানবিকতার সুষমামণ্ডিত এই ধর্মের ওপর ইমান আনে। এ ধরনের গভীর উপলব্ধি থেকে পশ্চিমা মুলুকে যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাঁদেরই একজন হলেন লিন্ডসি ইয়াসমিন কোনিগ। ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে এই নও মুসলিম মহিলার নিজস্ব ভাষ্য হলোঃ

"আমার নাম হলো লিন্ডসি ইয়াসমিন কোনিগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ম্যাইন অঙ্গরাজ্যে আমি বাস করি। আমি ২০০১ সালের আঠারোই সেপ্টেম্বরে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হই। আমার মুসলমান হবার গল্প এরকমঃ

"ইহুদিদের ধর্ম আমাদের খ্রিষ্টান ধর্মের চেয়ে আলাদা। খ্রিষ্টধর্ম এবং ইহুদি ধর্ম দুটো মৌলিক ধর্ম..." এই দুটি বাক্য আমরা আমাদের ক্লাসের এক শিক্ষকের কাছে শুনেছি। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। আমি সরকারী স্কুলগুলোতে পড়ার সময় ইসলাম বিষয়ে এমনকি একটি শব্দও কখনো শুনি নি। নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পরই টিভি পর্দায় সারাক্ষণ চোখ রাখতাম এবং তখনই ইসলাম ও মুসলমান শব্দগুলো কানে প্রবেশ করতে থাকে। তখনই খুব কৌতূহলী হয়ে উঠলাম মুসলমানদের সম্পর্কে। ভেতরে ভেতরে এ নিয়ে গবেষণার ইচ্ছে জাগলো। ঠিক করলাম পুরোটা দিন এ নিয়ে স্টাডি করবো। তাই করলাম।

ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে টাইপ করলাম 'মুসলিম'। সার্চ দিলাম। অমনি চোখের সামনে ভেসে উঠলো লাল,সাদা এবং নীল রঙের বিচিত্র লিংক। ইসলাম এবং মুসলমান শব্দগুলো সংবলিত সাইটের বিচিত্র অ্যাড্রেস বেরিয়ে এলো।প্রথম সাইটটিকে ঢুকলাম। ইসলাম সম্পর্কে এই সাইট থেকে বেশ কিছু জানলাম। এটুকুতেই বুঝতে পারলাম,পশ্চিমারা ইসলাম সম্পর্কে যেসব প্রচারণা চালায় সেসব প্রচারণার সাথে এর পার্থক্য প্রচুর।তাই আরো বেশি বেশি জানতে চাইলাম। ইতোমধ্যে মারিয়াম নামের মুসলিম একটি মেয়ের সাথে পরিচিত হলাম। এখানেই আমার ইসলাম গ্রহণের গল্পের প্রকৃত সূচনা হয়। মারিয়ামের সাথে সম্পর্ক গভীর হলো।ফলে তার কাছ থেকে সহযোগিতা পাবার সুযোগ হলো।

বিশেষ করে মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলো দেখে দেখে বুঝতে পারলাম প্রচারণাগুলো পক্ষপাতদুষ্ট,তাই মনে আরো বেশি প্রশ্ন জাগতে লাগলো। মারিয়াম অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে লাগলো। সেইসাথে ইসলামের বিধিবিধান এবং শিক্ষাগুলো দিতে লাগলো। এইসব হুকুম আহকাম অবশ্য আমার কাছে খুব বেশি আকর্ষণীয় ছিল না। তবে দার্শনিক প্রজ্ঞা, আল্লাহর দয়াশীলতা, সুশৃঙ্ক্ষল কাঠামো সবোর্পরি ইসলামের আধ্যাত্মিকতা আমাকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করেছিল।

লিন্ডসি কোনিগ আরো বলেনঃ "মুসলমান হবার আগে ধর্ম কর্মই করতাম না। সম্ভবত আমি আমার সমগ্র জীবনে পাঁচ বারের মতো গির্যায় গেছি। আমার মা একটি ক্যাথলিক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। বাবার ফ্যামিলিতেও কেউ ছিলেন প্রোটেস্টান্ট কেউবা নাস্তিক। তারমানে কেউই প্রকৃত অর্থে ধর্মানুসারী ছিলেন না। সে কারণেই আমাদের ফ্যামিলিতে ধর্মীয় জীবনযাপনের তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। ইসলাম গ্রহণ করার আগে সবসময় ভাবতাম আমার হৃদয়ের বিশাল একটি টুকরো বুঝি হারিয়ে গেছে কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না সেটা কী! কিন্তু যতোই দিন যাচ্ছিলো ইসলাম এবং তার শিক্ষার মাধুর্যের ফলে হৃদয়ের হারানো সেই অজানা বস্তুর অনুভব কমতে লাগলো। ২০০১ এর আঠারোই সেপ্টেম্বরে আমি মুসলমান হয়ে গেলাম। আমার হৃদয় হারানো বস্তু ফিরে পেলো। আমিও উপলব্ধি করলাম অন্তর আমার জীবন্ত হয়ে উঠলো, জীবন হয়ে উঠলো লক্ষ্যময়। আমার মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখে বাবা কৌতূহলি হয়েই ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলেন।"

লিণ্ডসি মুসলমান হবার পর হিজাব পরতে শুরু করেন। প্রথম যেদিন হিজাব পরেন সেদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেনঃ "যখন জানলাম হিজাব একটা ইসলামী বিধান ভাবলাম এটা একটা বিরক্তিকর ব্যাপার, কিন্তু হিজাব পরার পর উপলব্ধি করতে লাগলাম এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে সবোর্ত্তম একটা নিয়ামত। প্রথম যেদিন হিজাব পরে বাইরে গেলাম, খুব গর্ব অনুভব করলাম। শব্দ দিয়ে সেই অনুভূতি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। নারীর জন্যে হিজাব সর্বোত্তম জিনিস। হিজাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটা হলো পুরুষদের সামনে সতীত্ব বা চারিত্রিক সৌন্দর্য রক্ষা করা এবং নিরাপত্তা ও প্রশান্তি অনুভব করা।" বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোতে যেভাবে মুসলমান হতে শুরু করেছে, তা থেকে বোঝা যায় পথচ্যুত মানবতা সর্বশেষ ঐশী দ্বীনের ছায়াতলে আসার জন্যে এবং গোমরাহী আর হতাশার অবসান ঘটানোর জন্যে কীরকম তৃষ্ণার্ত ছিল। এখন একদিকে মুসলমান হবার প্রবণতা অপরদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় পশ্চিমারা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। সূরা বাকারার ৩৮ নম্বর আয়াতের একাংশে বলা হয়েছেঃ "...তোমাদের জন্যে যখন আমার পক্ষ থেকে হেদায়েত আসে,যারা তার অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই,তারা চিন্তিতও হবে না।"



No comments:

Post a Comment