Monday, 3 September 2012

তাবলীগ জামাত নিয়ে যারা সমালোচনায় পঞ্চমুখ তাদের বলছি

লিখেছেন ফারহাআঁখি ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১, রাত ০৩:৫৭

ইদানিং এস বি ব্লগে অনেক ব্লগার ভাইদেরই তাবলীগ জামাত সম্পর্কে অনেক নেতীবাচক পোস্ট ও কমেন্ট করতে দেখে রীতিমত হতাশ হয়েছি।
আমরা যারা আজ দাওয়াতী কাজে নিজেকে জড়িত করে দ্বীনের দায়ী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি, অথবা দাওয়াতী কাজে সামান্য হলেও নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি, তাদের কাছে আমার স্ববিনয় আহবান হচ্ছেঃ
আসুন না! একটু দেখে নিই আমাদের অবস্থা। আমিও একজন দ্বীনের সামান্য খাদেম হিসাবে বলছিঃ
আমরা দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছি কোথায়? মসজিদে? সভা-সেমিনারে? আম জলসায়? স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায়? শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হল রূমে?
একটু ভেবে দেখুন তো, এ সমস্ত স্থানে কারা আসছে? এ সমস্ত স্থানে আসছে-
যারা নিয়মিত নামাজ পড়ছে,
দ্বীন ধর্ম নিয়ে চর্চা করছে,
নিজেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যে সপে দিতে চেষ্টা করছে,
মহান আল্লাহ তায়ালার আযাব ও গজবের ভয় যাদের মধ্যে রয়েছে, তারাই। তাই নয় কি?
পক্ষান্তরে যারা মসজিদে আসছে না, কোন সভা সেমিনারেও যাচ্ছে না, স্কুল-কলেজ বা মাদ্রাসায়ও যাচ্ছে না, তাদেরকে দ্বীন কে বোঝাবে? তাদেরকে কলিমা ও এর অর্থ কে বোঝাবে? সুরা ফাতেহা, সূরা ইখলাস কে শিখাবে? হালাল-হারাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান কে দিবে?
কারণ, আমরা তো তাদের নিকট যাচ্ছিনা।
অত্যন্ত আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছেঃ আমরা হয়ত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছি, ইয়ারকণ্ডিশন গাড়ীতে চড়ে সভা-সেমিনারে যাচ্ছি, সাধারণ মুসলমানদের সেবা-যত্ন পেয়ে আমরা ধন্য হচ্ছি। বিনা বেতনে এক ওয়াক্ত ইমামতীও করতে আমাদের গায়ে লাগে। দাওয়াতী প্রোগ্রাম তো দুরের কথা।
মোটা অংকের পয়সা নিয়ে আমরা আজ দ্বীনের দায়ী হয়েছি। এক মাসের বেতন না পেলেই আমাদের ঈমানী জযবার ১০০% বহিঃপ্রকাশ ঘটবে নিশ্চিত।
তাহলে যারা খেটে খাওয়া মুসলমান, যারা দিন-মজুর, যারা জীবনে কোন দিন স্কুল-মাদ্রাসার বারান্দায়ও যায়নি, অথচ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে, কুশিক্ষা-অশিক্ষায় যারা জর্জরিত, মুসলমান অথচ কলিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বাক্যটি ঠিকমত উচ্চারণও করতে শিখেনি, তাদেরকে মসজিদ পর্যন্ত কে নিয়ে আসবে? কোন মাদ্রাসায় তাদের ভর্তি করানো যাবে? তাদের মুখে কলিমার উচ্চারণটুকু মৃত্যুর পূর্বে কে উচ্চারিত করাবে?
কেননা, আপনি আমি তো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেই দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে শিখেছি। উম্মতের এই করুণ ও নির্মম অবস্থায় যারা নিজের সময়, শ্রম, তথা টাকা-পয়সা খরচ করে পথ ভোলা মানুষদের সঠিক পথের সন্ধান দিচ্ছে, মসজিদ ভোলা মুসলমানদের মসজিদ পানে নিয়ে আসছে, কলিমা ও নামাজের সাথে শতভাগ অপরিচিত, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধ, যাদের কোন শিক্ষালয়েই এডমিশন হবে না, তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে যারা দ্বীনের প্রাথমিক কথাগুলি শিক্ষা দিচ্ছে, সমাজের অবহেলিত ঐ মুসলমানদের হাতে-পায়ে ধরে যারা আল্লাহর ঘর মসজিদে প্রবেশ করাচ্ছে, সেই তাবলীগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য ও নেতীবাচক পোস্ট দেখে অবাক হওয়া ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না?
যারা তাবলীগ জামাতের সমালোচনায় পঞ্চমুখ, তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা! আজ পর্যন্ত কতজন আল্লাহ ভূলা মুসলমানকে মসজিদে নিয়ে আসতে পেরেছেন? এমন কতজন মুসলমানকে কলিমা শিখিয়েছেন, যারা কলিমা না জেনেই বয়সের ভারে পিঠ বাঁকা হয়ে গিয়েছে? এমন কতজন মুসলমানকে সূরা ফাতেহা শিখিয়েছেন, যাদের দাড়ী সাদা হয়ে গিয়েছে? এমন কতজন মুসলমানকে পবিত্রতা অর্জনের শিক্ষা দিয়েছেন, যারা পবিত্রতা আর অপবিত্রতার ফারাকই বোঝে না? এমন কতজনকে হালাল-হারামের শিক্ষা দিয়েছেন? বান্দার হক্ব আর আল্লাহর হক্বের পরিচয় শিখিয়েছেন?
অবশেষে বলতে চাই, প্রথমে কমপক্ষে নিঃস্বার্থ ভাবে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নিজের সময়, শ্রম ও অর্থকড়ি খরচ করে দ্বীনের দাওয়াতী কাজ করে দেখান! অবহেলিত-উপেক্ষিত, কুশিক্ষা আর অশিক্ষায় জর্জরিত মুসলমানদের দ্বারে দ্বারে-ঘুরে ঘুরে, হাতে-পায়ে ধরে মসজিদে নামাজের কাতারে এনে দাড় করান। আলহামদু সূরাটি শিখান! এবং ঘোষণা করুন! ইন আজরিয়া ইল্লা আলাল্লাহ- কারো নিকট কোন প্রত্যাশা নয় বরং একমাত্র আল্লাহর কাছেই সকল প্রত্যাশা। অতঃপর তাবলীগ জামাতকে বলুন! আপনাদের মধ্যে অনেক ভূল রয়েছে, শুধরিয়ে নিন।
যারা তাবলীগ জামাত এর কার্যক্রম শুরু করেছেন, তারা নিজের খেয়ে-পরেই কাজ করেছেন, নিজের জীবনটাকেই শপে দিয়েছেন উম্মতের আল্লাহ ভূলা মানুষগুলোকে আল্লাহর পথে আনার জন্যে। অতএব আসুন! আমরাও এমনভাবে কাজ করতে সচেষ্ট হই!

No comments:

Post a Comment