মাওলানা যোবায়ের হাসান, নিজামুদ্দীন, দিল্লী
[ ২১ জানুয়ারি ২০১১, শুক্রবার, বাদ আসর]
মেরে আযীয, দোস্ত ও বুযুর্গ! মানুষ এই দুনিয়াতে অতি অল্প সময়ের জন্য এসেছে। এটা থাকার জায়গা নয়। ইবাদতের স্থান। একদম ক্ষণস্থায়ী। যারা একবার এসেছে, তারা অবশ্যই চলে যাবে। যারা চলে গেছে তারা আর কখনও ফিরে আসবে না।
মেরে দোস্ত! দুনিয়া অতি অল্প সময়ের স্থান। এখানে কেউ চিরদিনের জন্য আসেনি। কেউ থাকতেও পারবে না। আমাদের চিরস্থায়ী বাসস্থান তো মৃত্যুর পর। সেখানের প্রস্তুতির স্থান এটা। এখানে যারা নিজের ঈমান-আমল সঠিকভাবে তৈরি করে নেবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তাদের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া।
মেরে দোস্ত, আল্লাহর নিকট দুনিয়ার মূল্য একটা মাছির ডানার সমানও নয়। যদি এর কোনো মূল্য থাকতো তাহলে কাফেরদেরকে একটা দানাও দেয়া হতো না। আল্লাহর কাছে মূল্য একমাত্র খাঁটি ঈমানের। খালেস আমলই আল্লাহর নিকট দামী। মানুষের নিকট থেকে এই ঈমান-আমলই উদ্দেশ্য।
পেয়ারে দোস্ত, মানুষের ঈমান-আমল খালেস হলে তাদের নিকট সম্পদের কোনো মূল্য থাকে না। সম্পদ না থাকার কারণে তারা আফসোস করে না। দারিদ্রের কারণে দুনিয়াতে যে কষ্ট হবে কিয়ামতে এর বদলা তাদেরকে অবশ্যই দেয়া হবে। যারা দুনিয়া ভুলে আখেরাতের কাজ করবে যে কোনোভাবে তাদের এ জীবন কেটেই যাবে। কিন্তু যারা আখেরাত ভুলে দুনিয়া গ্রহণ করবে, দুনিয়ার ডুবে যাবে কিয়ামতের দিন তাদের আফসোসের শেষ থাকবে না। কারণ সেই জীবনের তো শেষ নেই। চিরদিনের স্থায়ী বাসস্থানের জন্য আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু?
পিয়ারে দোস্ত ও বুযুর্গ! আমরা দুনিয়ার কাজকেই আপন সুখ শান্তির মাধ্যম ভাবছি। অথচ সুখ-শান্তি দুনিয়ার কাজ-কর্ম, ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্রের ওপর নির্ভরশীল নয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপরই সবকিছু নির্ভর করে। ঈমান-আমল ঠিক করে যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারবে, আখেরাতে সেই কামিয়াব হবে। পার্থিব এই দুনিয়া তো থাকার জায়গা নয়। এখান থেকে একদিন যেতেই হবে। মানুষ যত সম্পদই অর্জন করুক সেগুলোর কিছুই তার সঙ্গে যাবে না। যাবে শুধু তার আমল। আমাদেরকে সেদিকেই খেয়াল রাখতে হবে।
মেরে আযীয, দোস্ত! আল্লাহ আমাদের মঙ্গলের জন্য দাওয়াতে তাবলিগের মেহনতের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমাদের এটার কদর করা চাই। এর মাধ্যমে নিজ ঈমানকে মজবুত করার, আমলকে ঠিক করার মন-মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। যেহেতু আমাদের মূল্য উদ্দেশ্য নয় আসল টার্গেটই আখেরাত সেখানের কামিয়াবির জন্য দ্বীনি দাওয়াতের সঙ্গে জুড়তে হবে। দাওয়াত ও তাবলিগকে আমাদের জীবনের লক্ষ্য বানাতে হবে। মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। তাদেরকে আল্লাহর পথের দিকে ডাকতে হবে। এসবের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর নিকট প্রিয় হয়ে উঠবো। আমাদেরকে আল্লাহর নিকট ক্ষমাও চাইতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের কাজ, দাওয়াতের কাজেই জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের এতে দুর্বলতা রয়েছে। অবহেলা হয়েছে। দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারিনি। তার কাছে মাফ চাইলে তিনি খুশি হবেন এবং তিনি আমাদের মাফ করে দেবেন।
মেরে আযীযো, মানুষ দ্বীনের কাজকে নিজের কাজ বানিয়ে নিলে আল্লাহ তার পেরেশানি দূর করে দেন। পক্ষান্তরে দুনিয়ার কাজকে আপন কাজ বানালে আল্লাহ তার পেরেশানি বাড়িয়ে দেন। এ জন্য আমাদেরকে দ্বীনের মেহনতের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। তবেই আমাদের জিন্দেগী শান্তির হয়ে উঠবে। সব পেরেশানি দূর হয়ে যাবে। আমরা যারা এখানে এসেছি- সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করি। আল্লাহর উদ্দেশ্য অনুযায়ী দ্বীনের কাজের ওপর বেশি বেশি মেহনত করি। যেন আমরা সবাই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হয়ে যাই। প্রত্যেক মানুষের ওপর দু’টি বড় দায়িত্ব রয়েছে। এক. আল্লাহর বান্দা হিসেবে খালেস ঈমানে তাঁর ইবাদত করা। দুই. নবীর উম্মত হিসেবে সবার ওপর দায়িত্ব হলো, অন্য ভাইয়ের কাছে যাওয়া এবং তাদেরকে আল্লাহর দাওয়াত দেয়া।
মেরে ভাইয়ো! আমরা তো দুর্বল, আল্লাহ মহান। তাঁর কাছে কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা মেহনত করে তাঁর কাছে দোয়া করবো। আল্লাহ ইচ্ছে করলে তিনি সবাইকে হিদায়াত দিতে পারেন। সবার হিদায়াতের জন্যই আমরা দোয়া করি। বান্দার কাজই তো মেহনত ও দোয়া করা। আর আল্লাহর কাজ বান্দার দোয়া কবুল করা। আমরা দোয়া করি আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
অনুলিখন : আবুল কালাম আনছারী
No comments:
Post a Comment