Saturday, 1 September 2012

যেভাবে আমি সত্যকে পেলাম-৩


রেডিও তেহরান, রবিবার, 26 আগস্ট 2012

ফ্রান্সের বিশিষ্টমহিলা ব্যক্তিত্ব ক্লেয়ার জোবার্টের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী

ফ্রান্সের বিশিষ্টমহিলা ব্যক্তিত্ব ক্লেয়ার জোবার্টের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী তুলে ধরব। ফরাসি এই মহিলা শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক বা ব্যাচেলর ডিগ্রি ও শিশু সাহিত্য বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং একজন বিশিষ্ট লেখক ও শিল্পী।
ইসলামে দীক্ষিত হওয়া সম্পর্কে মিসেস ক্লেয়ার বলেছেন, " বিভিন্ন ধর্ম ও মতাদর্শ নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর সময় ঘটনাক্রমে ও একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইসলাম ধর্মের সঙ্গে পরিচিত হই। এর আগ পর্যন্ত ভাবতাম, ইসলাম ইহুদি ধর্মের মতই বিশেষ জাতির ধর্ম। তাই ইসলামের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানি ও লেবাননী শিক্ষার্থীদের ধর্ম এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আমাকে জানতে উৎসাহ যোগায়। ফলে ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি বই পড়ে এ ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। সে সময় দুটি বিষয় আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছিল। একটি হল, স্রস্টার সাথে মানুষের সম্পর্কের ব্যাপারে ইসলামের ধারণা। আর দ্বিতীয়টি হল, ইসলামের বিশ্বদৃষ্টি ও জীবন যাপনের রীতি বা কর্মসূচির মধ্যে ভারসাম্য।"
নও-মুসলিম মিসেস ক্লেয়ার আরো বলেছেন: "ইসলাম সম্পর্কে ছয় মাস ধরে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর আমার মনে হল আমি আর নিরপেক্ষ থাকতে পারছি না। আমি সত্যকে জেনেছি এবং তা মেনেও নিয়েছি। এ ছাড়াও ইসলামের অন্য যে বিষয়টি আমার ওপর দারুণ প্রভাব ফেলেছিল তা হল ইসলাম সব নবীকে একত্ববাদ বা তৌহিদের প্রচারক হিসেবে সম্মান করে এবং তাঁদেরকে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছে। সত্যি বলতে কি আমি ইসলাম ধর্মের মাধ্যমেই হযরত ঈসা (আ.) বা যিশু খ্রিস্টের আসল পরিচয় জানতে পেরেছি। যদিও শৈশব থেকেই তাঁকে ভালবাসতাম, তা সত্ত্বেও তাঁর ব্যাপারে গির্জার দাবিগুলোকে বিশ্বাস করতে পারিনি। ইসলামের সাথে পরিচয়ের সুবাদে আমি অন্য দৃষ্টিতে ঈসা (আ.)-কে দেখার সুযোগ পেলাম ও তাঁকেও নিজ ধর্মের নবী হিসেবে জানলাম।"
মিসেস ক্লেয়ার আরো বলেছেন: "ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে স্রস্টা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে। স্রস্টা সম্পর্কে গির্জার দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও স্বচ্ছ নয়। এ দৃষ্টিভঙ্গি পিতা-খোদা ও সন্তান-খোদার মধ্যেই অস্পষ্ট ঘুরপাকে আবর্তিত হয়। এটা গির্জার সেইসব রহস্যের মধ্যে অন্যতম যেগুলো উপলব্ধি করা সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু আল্লাহ সম্পর্কে ইসলামের অত্যন্ত স্পষ্ট ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পেরে আমার অন্তরের অন্তস্থলে এ অনুভূতি জন্ম নিল যে এটা হচ্ছে সেই সত্য যা আমি বহু বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। "
নও-মুসলিম মিসেস ক্লেয়ার মনে করেন, " ইসলাম সহজ-সরল, অস্পষ্টতাবিহীন ও সার্বজনীন ধর্ম এবং এ ধর্ম মানুষের সামনে স্পষ্ট পথ দেখায়। ইসলাম এমন এক স্বচ্ছ বিশ্বাস তুলে ধরে যা বিশ্ব জগতকে চিনিয়ে দেয় এবং বিশ্ব জগতে মানুষের অবস্থানকে স্পষ্ট করে। "
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নও-মুসলিম মিসেস ক্লেয়ার এখন শিশুদের পবিত্র ও কোমল মনকে মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী এক আল্লাহমুখী করতে সচেষ্ট। তিনি তাদেরকে ধর্মের ছায়াতলে নিয়ে বিচ্যুতির ঝড়-ঝঞ্ঝার হাত থেকে রক্ষা করতে চান। ক্লেয়ারের মতে ধর্ম মানুষের চিন্তা ও বিশ্বাসকে সংশোধন করার সর্বাত্মক আন্দোলন। তিনি বলেছেন, " উচ্চতর মানবীয় নৈতিক গুণাবলী অর্জিত ও বিকশিত হয় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং অভ্যন্তরীণ দায়িত্ববোধের আলোকে। ধর্ম যথাযথ ও শক্তিশালী শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কারণ, ইচ্ছার স্বাধীনতা ধর্মের অন্যতম ভিত্তি এবং সবাইকে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। অন্যদিকে ধর্ম বলে অস্তিত্বের জগত অসীম জ্ঞান থেকে উৎসারিত হয়েছে এবং এ বিশ্ব জগত এমন এক ব্যাপক বিস্তৃত বই যার প্রতিটি পৃষ্ঠায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ । এসবই সব ধরনের গবেষণার উপযুক্ত। এ ধরণের বিশ্ব-দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্ব-জগত ও সৃষ্টির নানা রহস্য সম্পর্কে অব্যাহত চিন্তা-ভাবনায় সহায়তা করে, ফলে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতি ঘটে।"
ইসলাম সমাজের সব ক্ষেত্রে নারীর সুস্থ ও সক্রিয় উপস্থিতির জন্য হিজাব বা শালীন পোশাকের ব্যবস্থা করেছে। অন্যদিকে পাশ্চাত্য নারীর বলগাহীন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এ প্রসঙ্গে নও-মুসলিম মিসেস ক্লেয়ার বলেছেন, "ফরাসি নারীরা পদদলিত হওয়া অধিকারগুলো ফিরে পাওয়ার জন্য যুগে যুগে সংগ্রাম করেছে। তারা এসব সংগ্রাম অনেক কিছু অর্জন করলেও হারিয়েছেও অনেক কিছু। আসলে তারা পুরুষদের মাধ্যমে ব্যবহৃত কিছু অধিকারই পেতে চেয়েছিল। ফলে নারী-পুরুষের পার্থক্যের আলোকে নারীর বিশেষ ও প্রকৃত অধিকারগুলো তারা অর্জন করতে পারেনি, যেসব অধিকার হুবহু পুরুষদের ব্যবহৃত অধিকার না হওয়া সত্ত্বেও নারীকে মানুষ হিসেবে পুরুষের সমান মর্যাদাদেয়। ফরাসি নারীদের এ আন্দোলনে (পাশ্চাত্যের নারীবাদী আন্দোলনের অনুকরণের ফলে)সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে পরিবার-ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা অত্যন্ত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। কারণ, তারা (নারীবাদীরা) নারী ও পুরুষ যে পরস্পরের পরিপূরক তা বিশ্বাস করে না। বরং তারা নারী ও পুরুষের পৃথক স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধার নীতিতে বিশ্বাসী। পাশ্চাত্যের বর্তমান সংস্কৃতিতে ব্যক্তিকে পরিবারের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়। আর এ জন্যই পরিবার-ব্যবস্থা এতটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।"
ফরাসি নও-মুসলিম মিসেস ক্লেয়ার আরো বলেছেন,"দাম্পত্য জীবনে সমঝোতার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মত্যাগ ও পরস্পরকে ধৈর্যের সঙ্গে উপলব্ধি করা জরুরি। পাশ্চাত্যে ব্যক্তি-স্বার্থকে পরিবারের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে কোনো সমস্যা দেখা দিলেই তারা ব্যক্তি স্বার্থ আদায়ের জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন এবং কোনো ধৈর্য না ধরেই বা কোনো ছাড় না দিয়েই স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাই পশ্চিমা নারী তাদের ঐতিহ্যবাহী অবস্থান থেকে মুক্ত হওয়া সত্ত্বেও এখনও উপযুক্ত অবস্থান খুঁজে পায়নি।
এভাবে নারীর অধিকার ও তার সামাজিক সম্মান সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে জুলুম চলায় আমি এ ব্যাপারে বেশ স্পর্শকাতর ছিলাম। ইসলাম নারীর দায়িত্ব ও ভূমিকার ক্ষেত্রে পার্থক্যে বিশ্বাসী হওয়ার পাশাপাশি তাদের মানবীয় সম্মানকে সমান বলে মনে করে এবং একইসাথে তাদেরকে একে-অপরের পরিপূরক বলে মনে করে। আমার দৃষ্টিতে ইসলামের এই দৃষ্টিভঙ্গি নারী-পুরুষের সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভাল পথ।"
ফরাসি নও-মুসলিম মিসেস ক্লেয়ার হিজাবের মধ্যে প্রশান্তি ও সম্মান অনুভব করেন। পাশ্চাত্য হিজাবকে নারীর জন্য বন্দীত্ব বলে তুলে ধরতে চায়। ইসলামের শত্রুরা জানে মুসলিম নারীকে পবিত্রতা ও শালীনতা থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হলে মুসলিম প্রজন্মের ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসান চালানো সহজ হবে এবং মুসলিম যুব প্রজন্মকে চরিত্রহীন করার পথ সুগম হবে। ইসলাম নারীকে হিজাব ও সতীত্ব বজায় রাখার দিকে আহ্বান জানায়। সন্তানকে মানুষ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে স্নেহময়ী মায়ের প্রশিক্ষণের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয় ইসলাম।
হিজাব ফরাসি নও-মুসলিম মিসেস ক্লেয়ারকে গৃহবন্দী করেনি বরং বিনম্র করেছে। হিজাব পরেও তিনি বিভিন্ন গঠনমূলক ক্ষেত্রেসক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। শিশু সাহিত্য সম্পর্কিত তার কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। #



যেভাবে আমি সত্যকে পেলাম-২

রেডিও তেহরান. রবিবার, 26 আগস্ট 2012
ফরাসি নও-মুসলিম লায়লা হোসাইনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ

ফরাসি নও-মুসলিম লায়লা হোসাইনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী তুলে ধরব। পূর্ণাঙ্গ ও সর্বশেষ ঐশী ধর্মইসলামের আলোকিত বিধি-বিধান, বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং নানা প্রথা যুগ যুগ ধরে সত্য-সন্ধানী বহু অমুসলিম চিন্তাশীল মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। যেমন, জ্ঞান-চর্চার ওপর ইসলামের ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ অনেক অমুসলিম গবেষককে অভিভূত করেছে। ইসলামী হিজাব বা শালীন পোশাক তথা পর্দার বিধানও আকৃষ্ট করে আসছে অমুসলিম নারী সমাজকে। ফরাসি নারী লায়লা হোসাইনও তাদের মধ্যে অন্যতম।

পাশ্চাত্যের বঞ্চিত ও প্রতারিত নারী সমাজ ইসলামী শালীন পোশাকের মধ্যে প্রশান্তি, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা খুঁজে পাচ্ছেন। পাশ্চাত্যের অনেক নারীই সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, তারা এই পশ্চিমা ভূবনে মুসলিম মহিলাদের হিজাব দেখেই ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়েছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তারা বলেছেন, আমরা হিজাবের মধ্যে সত্যিকারের সুখ, প্রশান্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করছি। ইসলামী হিজাবের এই প্রভাবের কারণে পশ্চিমা সরকারগুলো নানা অজুহাতে হিজাব পরিহিতা নারীদের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে। এ ছাড়াও এসব সরকার পর্দানশীন নারীদেরকে একঘরে করার ও দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

ফরাসি নও-মুসলিম লায়লা হোসাইন ছিলেন একজন ইহুদি। " আহলুল বাইত" টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, হিজাবের সৌন্দর্য দেখেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং বেছে নিয়েছেন পরিপূর্ণ হিজাব। লায়লা হোসাইন বলেছেন, " মুসলমানদের সম্পর্কে সব সময়ই এক ধরণের বীতশ্রদ্ধা ছিল আমার মধ্যে। আমি এভাবেই বড় হয়েছি। কিন্তু আমি সব সময়ই হিজাব পরা মুসলিম নারীদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। তাদের পবিত্রতা ও বিনম্রতা আমাকে মুগ্ধ করত। আমার দৃষ্টিতে তাদের রয়েছে এক ধরণের নিজস্ব সৌন্দর্য। আমি ইহুদি সমাজের সদস্য হওয়ায় ইসলামী হিজাব রপ্ত বা আয়ত্ত্ব করা আমার জন্য কঠিন কাজ ছিল না। কিন্তু ঈমান বা বিশ্বাস সম্পর্কে মানুষের ধারণাগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। তারা (অর্থাৎ ইহুদিরা) মুসলিম মহিলাদের চেয়ে ইহুদি মহিলাদেরকেই বেশি শ্রদ্ধা করত।"

ইসলামের অন্য অনেক সৌন্দর্য গবেষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় লায়লা হোসাইনের কাছে। পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধিতে তাকে সহায়তা করেছে। তিনি বলেছেন, " কোরআন ছিল আমার প্রথম অনুপ্রেরণা। যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ আমি পেয়েছি তা থেকে বুঝতে পেরেছি যে, ইসলাম সত্য ও খাঁটি ধর্ম। কারণ, এ ধর্ম সব নবী-রাসূলকেই শ্রদ্ধা করে। আর আমার দৃষ্টিতেও এটা খুবই যৌক্তিক। ধীরে ধীরে আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয় যে ইসলামের শুধু বাহ্যিক দিক নয়, আছে অভ্যন্তরীণ দিকও। তাই ভেতর থেকেও ইসলামকে রক্ষা করতে হবে।"

ইসলামে মানুষের আত্মা ও দেহ- উভয়ই গুরুত্ব পেয়েছে। প্রকৃত মুসলমান হওয়ার জন্য ইসলামী বিশ্বাসের শুধু মৌখিক স্বীকৃতি ও বাহ্যিক আচার-আচরণ বা ইবাদতই যথেষ্ট নয়। মন বা হৃদয়ের গভীরে ইসলাম কতটা স্থান করে নিয়েছে-লায়লা হোসাইনের মতে তাও গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমা সরকারগুলো ইসলাম সম্পর্কে সঠিক চিত্র তুলে না ধরায় নও-মুসলিমরা অনেক সমস্যার শিকার হন। কিন্তু ইসলামের সৌন্দর্য ও বাস্তবতা নওমুসলিমদের কাছে এতই হৃদয়গ্রাহী যে সব ধরনের কঠোরতা, ক্লেশ ও বাধা-বিঘ্ন সহ্য করা তাদের জন্য সহজ হয়ে পড়ে।

লায়লা হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, " হিজাব পরার মাধ্যমে আমি নিজেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছি-এই ভেবে আমার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কারণ, ফ্রান্সে হিজাব নিষিদ্ধ। স্কার্ফ বা ওড়না মাথায় দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যাওয়া এ দেশে নিষিদ্ধ, ফলে হিজাবধারীকে সামাজিক অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়। শুধু বিশেষ পোশাক পরার কারণে আমি আমার সামাজিক জীবনকে বিপদাপন্ন করেছি বলে আমার পরিবার মনে করত। এ অবস্থা মেনে নেয়া তাদের জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। তারা মনে করত আমি আমার মুসলমান হওয়ার বিষয়টি হিজাবের মাধ্যমে প্রকাশ না করলেই ভাল হত। ইসলামের প্রতি আমার বিশ্বাস কেবল মনের মধ্যে লালন করলেই তা যথেষ্ট হত বলে তারা মনে করত। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পবিত্র কোরআনে ও রাসূল (সা.)'র অনেক হাদিসে বা সুন্নাতে হিজাবের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মুসলিম পরিচয়ের জন্যেও যে তা জরুরি তা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছ কোরআন-হাদিসে। তাই হিজাব পরিত্যাগ করতে রাজি হইনি আমি। আমার কাছে হিজাব শুধু হাত ও মাথা ঢাকার বিষয় নয়, বরং এর চেয়েও বড় কিছু।"

ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে অনেক ইহুদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন। এ ধরনের ঘটনা দিনকে দিন বাড়ছে। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রচলিত ইহুদি ধর্ম (যা আসলে আদি বা অকৃত্রিম ইহুদি ধর্ম নয়) অনুযায়ী এ ধর্ম ত্যাগ করা যায় না। ফলে নও-মুসলিম ইহুদিরা অনেক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। তাসুয়ি ইহুদা লাভ নামের একজন ইহুদি পুরোহিত বলেছেন, ইহুদির মেয়েরা অন্য ধর্ম গ্রহণেরও পরও ইহুদি থেকে যায়। কারণ, ইহুদি ধর্ম অনুযায়ী, ইহুদি মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া ইহুদি অন্য ধর্ম গ্রহণ করার পরও ইহুদি থেকে যায়।

এ ছাড়াও বিশ্বের ইহুদিদের অভিভাবক হওয়ার দাবিদার দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনের বাইরে ইহুদিদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ঠেকানোর জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও ইসরাইলি দৈনিক মারিভ সম্প্রতি লিখেছে,

"ইসরাইলের ভেতরেই প্রতি বছর শত শত ইহুদি নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ধর্মীয় পরিচয় পরিবর্তনের ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য ইসরাইলি বিচার-বিভাগের কাছে আবেদন জানাচ্ছে। ইসরাইলি ইহুদিদের মধ্যে এ ধরনের আবেদনের সংখ্যা ২০০৮ সালে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।"আবার অনেক ইহুদি ধর্ম পরিবর্তন সংক্রান্ত এ ধরনের আবেদন করছেন না, কিংবা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে গেলে যেসব সীমাবদ্ধতা ও হয়রানির শিকার হতে হবে তা এড়ানোর জন্য এ পবিত্র ধর্ম গ্রহণের কথা প্রকাশ করছেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতা এবং ইহুদিবাদীদের হাতে তাদের সম্পদ দখল ও লুণ্ঠনের ঘটনাগুলো অধিকৃত ফিলিস্তিনে আসা ইহুদিদেরকে বিকৃত হয়ে পড়া ইহুদি ধর্ম ত্যাগের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

ইহুদিদের মধ্যে অন্য ধর্ম গ্রহণের প্রবণতা বাড়তে থাকায়, বিশেষ করে ইসলামের আকর্ষণ তাদের মাঝে বাড়তে থাকায় ইহুদিবাদী ইসরাইল অ-ইহুদি বিয়ে করাকে ইহুদি যুব সমাজের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবেনিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।অ-ইহুদি স্বামী বা স্ত্রীর প্রভাবে ইহুদি যুব সমাজ নিজ ধর্ম ত্যাগ করছে বলেইইসরাইল তা ঠেকাতে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইহুদিবাদী রাজনৈতিক নেতা আভরি আভরবাখ বলেছেন, প্রত্যেক ইহুদির নিজ ধর্ম ত্যাগের ঘটনা ইহুদি গ্রুপগুলোর জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ক্ষতি বয়ে আনছে। কিন্তু লায়লা হোসাইনের মতে, সত্য ধর্ম তার স্বচ্ছতা ও স্পষ্ট নানা শিক্ষার কারণেই মানুষের অন্তর জয় করছে এবং জীবন, ভালবাসা ও বিশ্বাসের প্রকৃত অর্থ তুলে ধরছে। পবিত্র কোরআনেআল্লাহ বলেছেন, "তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।" #

যেভাবে আমি সত্যকে পেলাম-১

রেডিও তেহরান, শুক্রবার, 31 আগস্ট 2012

‘স্টিভেন ক্রাওস’-এর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ

ইসলাম এমন এক ধর্ম যা মানুষ ও মানব জাতির জন্য দিনকে দিন উন্নতির উচ্চতর সোপানগুলো অতিক্রমের সুযোগ এনে দেয়। যারা উন্নতি চায় তাদের জন্য প্রতি দিনই উন্নতির নতুন দিগন্ত খুলে দেয় এই মহান ধর্ম। বিকৃত নানা মত, পথ ও ধর্ম মানুষকে ডুবিয়ে রাখে অন্ধকারের অমানিশায়। কিন্তু যারা সত্য-সন্ধানী তারা বিচ্যুতির চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে প্রস্তুত নন। তারা হচ্ছেন এমন মানুষ যারা জীবনের প্রকৃত অর্থ ও লক্ষ্য খুঁজে বেড়ান। আর একমাত্র ইসলামই তাদের কাছে জীবনের প্রকৃত অর্থ ও লক্ষ্য তুলে ধরে এবং পরিতৃপ্ত করে তাদের তৃষিত আত্মাকে সত্যের অমিয় ধারায়। নিউইয়র্কের অধিবাসী মার্কিন নও-মুসলিম ‘স্টিভেন ক্রাওস' এমনই একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিত্ব। সাবেক ক্রাওস এখন আবদুল লতিফ আবদুল্লাহ। তিনি মনে করেন ইসলাম প্রতি দিনই তার জীবনে আনছে পরিবর্তন।আর এ জন্য মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ আবদুল লতিফ আবদুল্লাহ। তার মতে,"একমাত্র মুসলমানই আল্লাহর অনুগ্রহের গভীরতা অন্যদের চেয়ে ভালভাবে অনুভব করতে পারেন। কারণ, একজন মুসলমান প্রতিদিনই আল্লাহর সামনে সিজদাবনত হন। একজন (প্রকৃত) মুসলমান আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করেন।"

মার্কিন নও-মুসলিম ‘স্টিভেন ক্রাওস' মনে করেন ইসলাম ইহুদি বা খ্রিস্টান ধর্মের মত নিছক কিছু বিশ্বাসের সমষ্টি নয়। বরং ইসলাম মানুষকে সত্য পথ দেখায়। প্রকৃত ক্ষমতার উৎস তথা আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয় এ মহান ধর্ম। ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,

" ইসলাম সম্পর্কে জানাশোনা শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময়। আমি ছিলাম একজন প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান। তবে দীর্ঘকাল ধরেই ধর্মীয় কোনো ততপরতায় জড়িত ছিলাম না। এ ধর্ম সম্পর্কে অনীহা দেখা দেয় এ কারণে যে, স্রস্টার সত্তা এবং মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিষয়ে খ্রিস্ট ধর্মের বলার তেমন কিছুই নেই। স্রস্টার সাথে মানুষের যে সম্পর্কের কথা এ ধর্মে বলা হয়েছে তা অতি অস্পষ্ট ও দূরহ হওয়ায় আমি এমন কোনো মতবাদ বা ধর্ম খুঁজছিলাম যা আল্লাহ ও তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আরো উন্নত বক্তব্য রাখবে। কেন মানুষ সরাসরি আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে পারবে না? কিভাবে আল্লাহ একজন মানুষের রূপ নিতে পারেন? তাই ধর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পাওয়ার জন্যব্যাকুল ছিলাম যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখাবে সত্যিকারের সুপথ বা হেদায়াত, যুক্তিহীন বিশ্বাস ও আবেগ-প্রসূত ধারণা নয়। একজন মুসলমানের সঙ্গে পরিচয় ও তার জীবন-যাপন প্রণালী থেকে আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই। এভাবে মহান আল্লাহ সত্যের পথ খুলে দিয়েছেন আমার জন্য।
মানসিক প্রশান্তি সব সময়ই মানুষের জন্য জরুরি বা অপরিহার্য চাহিদা। এই চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। কারণ, বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ হতাশা ও উত্তেজনার মত নানা ধরনের মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীনতা মানসিক রোগগুলোর অন্যতম প্রধান কারণ। অন্য কথায় আল্লাহর সঙ্গেযাদের সম্পর্ক যত শিথিল বা দুর্বল তারা তত বেশি মানসিক রোগে ভোগেন।
অথচ মুমিন মুসলমানের কাছে আল্লাহর শক্তি ও মর্যাদা বা স্থান সব কিছুর উর্ধ্বে। আল্লাহ তার কাছে নিছক বিশ্বাসের বিষয় নয়। একইসঙ্গে তিনি মানুষের সবচেয়ে কাছের সত্তা বা আপনজন। সুরা কাফ-এর ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
"আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও কাছে রয়েছি।"
সৌভাগ্য ও কল্যাণের পথ প্রদর্শক হিসেবে আল্লাহর উপস্থিতিকে মানুষ অনুভব করতে সক্ষম।
সুরা হাদিদ-এর ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,"তিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।"
তাই আল্লাহর সঙ্গে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তারা পরিপূর্ণ সুখ ও প্রশান্তি অনুভব করেন। তারা কখনও কোনো ধরনের হতাশা ও শূণ্যতার শিকার হন না।
সুরা ফাতহ-এর ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, "তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন, ফলে তাদের ঈমানবাড়তেই থাকে।..."
জড়বাদী বা বস্তুবাদী মার্কিন সমাজের আধ্যাত্মিক শূণ্যতা ও অন্তসারশুণ্যতা সমাজ বিশেষজ্ঞ ‘স্টিভেন ক্রাওস' বা আবদুল লতিফ আবদুল্লাহ-কে ব্যথিত করে। এ ধরনের সমাজে অর্থ ও ভোগবাদকেই জীবনের লক্ষ্য বা সুখের ঠিকানা বলে মনে করা হয়। কিন্তু প্রকৃত সুখ তাদের কাছে মরীচিকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন:
"আমি সমাজ বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ। মার্কিন সমাজের রোগগুলো নিয়ে আমি গবেষণা করি। এসব গবেষণার মাধ্যমে আমার কাছে স্পষ্ট যে, বেশিরভাগ সামাজিক রোগগুলো সমাজের অসুস্থ আচরণের এবং উচ্চতর লক্ষ্য না থাকারকুফল। অথচ ইসলাম সুস্থতম জীবন-যাপনের পথ দেখিয়ে দিয়েছে মানব জাতিকে। জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি তাও স্পষ্ট করেছে ইসলাম। তাই একমাত্র ইসলামই দিতে পারে সব ধরনের সামাজিক সংকটের সমাধান। ফলে এটা স্পষ্ট হল, দৈনন্দিন জীবনেই সচল রয়েছে ইসলাম এবং অন্য ধর্মগুলোর সঙ্গে এ ধর্মের গভীর বা মৌলিক তফাত রয়েছে। ইসলামকে সব মানুষেরই প্রয়োজন এবং এ ধর্ম হারিয়ে যাওয়া এমন সম্পদের মত যা আজো মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ইসলামই হচ্ছে জীবনের অর্থ ও লক্ষ্যে পৌঁছার এবং সৌভাগ্য অর্জনের পথ। কারণ, এ ধর্ম সরাসরি মানুষকে সত্য ও ক্ষমতার প্রকৃত উৎস তথা আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয়।"
নও-মুসলিম‘স্টিভেন ক্রাওস'বা আবদুল লতিফ আবদুল্লাহ'র মতে, ইসলামকে চেনার পাশাপাশি তিনি এ ধর্মের আশ্রয়ে জীবন যাপনও করতে পারছেন এবং মুসলিম বন্ধুর জীবনের পরতে পরতে ইসলামের প্রয়োগ স্বচক্ষে দেখছেন। এটাইইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নেয়ার অন্যতম বড় কারণ। তিনি বলেছেন, "জীবন-যাপনের সব বিধানই রয়েছে ইসলামে। মানুষ যখন ইসলামী পরিবেশে থাকে তখন তারা দৈনন্দিন জীবন থেকে ইসলামকে পৃথক বা বিচ্ছিন্ন মনে করে না। এটা হল খ্রিস্ট ধর্মের ঠিক বিপরীত। খ্রিস্ট ধর্ম প্রাত্যহিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। ইসলাম প্রতিটি দিনের রুটিন কাজ-কর্মকে এবাদতের দৃষ্টিতে দেখতে বলে।"
ঈমান যে মানুষের মানসিক রোগ সারাতে পারে তা স্বীকার করেছেন বিখ্যাত মার্কিন দার্শনিক ও মনোস্তাত্তিক উইলিয়াম জেমস। নও-মুসলিম‘স্টিভেন ক্রাওস' মনে করেন ইসলামই তাকে দেখিয়ে দিয়েছে যে কেন ঈমানহীন মানুষ হতাশা ও মানসিক প্রশান্তিহীনতার শিকার হয়। তিনি আল্লাহবিহীন জীবনকে ‘ভয়ানক' বলে মন্তব্য করেছেন। ক্রাওস বলেছেন,
"আমি এটা ভালভাবে বুঝছি, কারণ, এক সময় আমি নিজেই এই ভয়ানক আতঙ্ক অনুভব করতাম। কিন্তু মুসলমান হওয়ার পর এখন ব্যক্তিত্বের স্বাধীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছি। অথচ এই স্বাধীনতায় আমার কোনো হাত নেই, সবই রয়েছে আল্লাহর হাতে। যেখানে যা থাকা উচিত তা-ই রয়েছে ইসলামের বিধানে। তাই জীবনকে এখন অর্থপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল মনে হয়। আজ আমি বুঝতে পেরেছি কেন এ বিশ্বে এসেছি, কোথায় যাব এবং কিভাবে জীবন যাপন করা উচিত ও কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। আমি আশাবাদী ও দোয়া করছি পথহারা অন্য মানুষেরাও আমার আজকের এ আনন্দ আস্বাদন করতে পারেন।"#

ইসলাম গ্রহন-২

রেডিও তেহরান. সোমবার, 11 জুলাই 2011  
ইসলাম গ্রহণ করলেন দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্টের ছেলে
১০ জুলাই (ইসলাম রেডিও): সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট সিলভা কিরি'র ছেলে জন সিলভা কিরি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে মুহাম্মদ রেখেছেন।
তিনি সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি মসজিদে ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে সুদানের দৈনিক আল ইনতিবাহা। নও মুসলিম মুহাম্মদ বলেন, পরকালে আমি স্থায়ী সুখের স্থান বেহেশত পেতে চাই। দক্ষিণ সুদানে ফিরে গিয়ে তিনি সেখানকার অমুসলমিদেরকে ইসলাম গ্রহণের আকুল আহবান জানাবেন বলে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট সিলভা'র পুত্র ‘জন' ওরফে মুহাম্মদ।
খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদান বিশ্বের ১৯৩তম স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কয়েক দশক ধরে একনাগাড়ে সংঘর্ষের পর স্বাধীনতা লাভ করল দক্ষিণ সুদান।
বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি দক্ষিণ সুদান এবং দেশটিতে প্রতি সাতজন শিশুর মধ্যে একজন পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মারা যায়।#
বুধবার, 04 মে 2011   
মার্কিন অভিনেত্রী প্যারিস হিলটনের ইসলাম গ্রহণ
যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী প্যারিস হুইটনি হিলটন শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তার মুখপাত্র আয়ান ব্রিঙ্কহাম সিবিএস নিউজকে একথা জানিয়েছেন।
ব্রিঙ্কহাম বলেছেন,তিনি বেশ কিছুদিন থেকে ইসলাম গ্রহণের কথা চিন্তাভাবনা করছিলেন। বিশেষ করে ২০০৪ সালে সেঞ্চুরি রিজিওনাল ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থানের সময় ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। ওই ডিটেনশন সেন্টারে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত লোকের সংস্পর্শে এসে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর অতীতের ক্লেদাক্ত জীবন থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। জেদ্দায় একটি ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র থেকে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনের পরিপূর্ণ শান্তি খুঁজে পেয়েছি। আগে আমি একটি নষ্টা মেয়ে হিসেবে পরিচিত ছিলাম। সে অবস্থার এখন পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
মিস হিলটন আগামী সপ্তাহে লস এঞ্জেলসে ফিরে গিয়ে বেভারলি হিলের মধ্যভাগে একটি ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা করছেন। তার নামও পরিবর্তন করে তিনি ‘তাহিরা' রাখতে চান। তার এই স্কুল তিনি বহু তারকাখ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে ধর্মীয় শিক্ষাদানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চান। উল্লেখ্য, প্যারিস হিলটন বিশ্বখ্যাত হিলটন হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা কনারাড হিলটনের প্রপৌত্রী।
শোবিজ জগতের সুপার স্টার, স্বপ্নলোকের বাসিন্দা ও পৃথিবীর কোটি মানুষের হৃদয় কাঁপানো এই তারকার এমন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বর্তমান প্রজন্মের চিন্তার জগতে ঝড় তোলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। গত বছরের শেষের দিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানী নভোচারী সুনীতা উইলিয়াম সদলবলে ইসলাম গ্রহণ করে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি খুলে দেয়ারও চেষ্টা করেছেন।
পশ্চিমা দুনিয়ায় ইসলাম একটি বিকাশমান ও নন্দিত জীবনব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশের খবর একেবারে নতুন না হলেও সম্প্রতি পাশ্চাত্যের খ্যাতিমান বেশ কয়েকজন ব্যক্তিত্বের ইসলাম গ্রহণ গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। বিখ্যাত পপস্টার মাইকেল জ্যাকসনের রহস্যাবৃত মৃত্যুর পর তার মুসলিম পরিচয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে প্রচার-প্রোপাগাণ্ডা ও বিচিত্র তথ্য ছড়ানো হয়েছে। অনেকের মতে, তার ইসলাম গ্রহণের খবরটিকে পশ্চিমা মিডিয়া এবং সরকারগুলো প্রকাশ হতে দেয়নি এবং তিনি নিজেও এ ব্যাপারে প্রচণ্ড চাপে ছিলেন।
আফগানিস্তানের তালেবানদের হাতে বন্দি হয়ে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য ও মাহাত্ম্যে বিমুগ্ধ ব্রিটিশ নারী সাংবাদিক র্যাডল তো তার ইসলাম গ্রহণের কথা গোটা দুনিয়ার সামনে সগর্বে ঘোষণা দিয়েছেন। আরেকজন বিখ্যাত নারী সাংবাদিক সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকার ইসলাম গ্রহণের খবর পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে অবাক করেছে। সাড়া জাগানো মার্কিন অভিনেত্রী প্যারিস হিলটন মুক্তির এই মিছিলে সংযোজিত সাম্প্রতিক সময়ের সর্বশেষ নাম।
যারা ইসলামকে সেকেলে, ব্যক্তি-স্বাধীনতা, আধুনিকতা, মানবাধিকার ও প্রগতির প্রতিবন্ধকরূপে চিত্রিত করার পণ্ডশ্রমে সময় ব্যয় করেন উল্লিখিত ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণে ক্ষণিকের জন্য হলেও আশা করি তারা লজ্জায় মুখ লুকাবেন। গড্ডালিকা প্রবাহে চিন্তার ডিঙ্গি ভাসিয়ে না দিয়ে স্থির হয়ে ভাবতে বসবেন। এক সময়ের হার্টথ্রব নায়িকা, গ্লামার গার্ল এবং বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব যখন ইসলামের শালীন পোশাক তথা বোরকা বা হিজাব পরিহিতা হিসেবে নিজেকে সগৌরবে উপস্থাপন করেন, তখন আধুনিকতা ও নান্দনিকতার নামে অবাধ যৌনতাবাদীদের চেহারায় কালো মেঘের ছায়া নামে। আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন, সচেতন, শিক্ষিতা নারী সমাজ এতে খুঁজে পান জীবনে চলার আলোকিত পথ, নতুন উদ্যম, বিশ্বাসদীপ্ত প্রেরণা। প্রবল আত্মবিশ্বাসে উচ্চারণ করেন-‘আমি মুসলিম, ইসলাম আমার স্বপ্নের ঠিকানা'। অবস্থাদৃষ্টে এটা অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে, ফ্যাশনের নামে স্বল্পবসন আর শিল্পের নামে নারীর পণ্যায়নসহ অবাধ ভোগের কৌশলগুলোকে হালাল করার জন্য যারা এতদিন নারীসমাজকে বিভ্রান্ত করেছেন; তাদের জগত ছোটো হয়ে আসছে। কারণ নারীরা জাগছে এবং খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্বকীয়তা ও স্বাধীনতার ঠিকানা ‘ইসলাম'
রবিবার, 17 এপ্রিল 2011 
জার্মানী’র হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ইসলাম গ্রহণ
জার্মানীর হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কারহার্ড ম্যানকোল্ড ইরাকের কারবালা শহরে ইমাম হুসাইন (আ.) এর মাজার প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আমি এই দ্বিতীয়বারের মত ইরাক সফর করছি। অবশ্য আমার এবারের ইরাক সফর নিজের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার বিষয়টি ঘোষণা দেয়ার জন্য। যখন আমি ইমাম হুসাইন (আ.) এর মাজার প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলাম তখন আমার মধ্যে এমন এক ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি হল যা আগে কখনও অনুভব করিনি। আমি যখন দেখলাম হাজার হাজার লোক বহুদূরের পথ পায়ে হেঁটে ইমাম হুসাইন (আ.) এর মাযার জিয়ারত করতে আসে, তখন আমি অনুভব করলাম যে, আমি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছি। অতএব, আমার অন্তরে ইসলাম ধর্মের এ আকিদা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হওয়ার পর আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।'
ইমাম হুসাইন (আ.) এর মাজারের মোতাওয়াল্লি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন শেইখ আব্দুল মাহদী কারবালায়ী জার্মান এ শিক্ষকের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি এ নওমুসলিমকে মোবারকবাদ জানান।#
শনিবার, 13 আগস্ট 2011    
আলজেরিয়ায় প্রতিদিন একজন করে ইসলাম গ্রহণ করছেন
১৩ আগস্ট (ইসলাম রেডিও) : পবিত্র মাহে রমজান শুরুর পর আলজেরিয়ায় প্রতিদিন একজন করে অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন।
আলজেরিয় সংবাদপত্র আল খাবারের বরাত দিয়ে জার্মান বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, এ বছর রমজান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত একজন বিদেশীসহ মোট ১১ জন অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এ নিয়ে এ বছরের প্রথম সাত মাসে ১৪৬ ব্যক্তি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। আলজেরিয়ার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ পরিসংখ্যানের সত্যতা স্বীকার করেছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। ২০০৪ সালে আলজেরিয়ায় ৪৪ জন ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিল। গত বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৮-এ দাঁড়ায়।
আলজেরিয়ায় অবস্থানকারী ফরাসী ও চীনা ব্যবসায়ীরা মুসলমানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও ইসলামের শিক্ষার সাথে পরিচিতি লাভের পর ইসলাম গ্রহণ করছেন বলে অন্য এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। #

ইসলাম গ্রহণ-১

রেডিও তেহরান,শনিবার, 30 জুলাই 2011 

ইসলাম গ্রহণ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার পার্নেল
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার ওয়েন পার্নেল। ব্যক্তিগত গবেষণা ও ভাবনা থেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণের উদ্বুদ্ধ হন বলে তিনি জানান।
ইসলাম ধর্মগ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি জানান, গত জানুয়ারি থেকেই ইসলামের প্রতি এক ধরনের অনুরাগ জন্মেছিল তার। নতুন ধর্ম গ্রহণ করার পর পার্নেল তার নাম পরিবর্তন করে ওয়ালিদ রেখেছেন। যার অর্থ দাঁড়ায় ‘সদ্য ভূমিষ্ঠ পুত্র সন্তান'।
পোর্ট এলিজাবেথে জন্ম নেয়া পার্নেল বলেছেন, "যদিও আমি এখনো ইসলামি নাম চূড়ান্ত করিনি তবুও আমি ওয়ালিদ নামটি বিবেচনা করছি, যার অর্থ সদ্যজতা ভূমিষ্ঠ পুত্র সন্তান। কিন্তু আমার নাম এখনো ওয়েন ডিলন পার্নেল। আমি এখন সাসেক্সে ক্রিকেট খেলছি এবং এটাতেই আমার মনোযোগ।" শ্রদ্ধার সঙ্গে নতুন ধর্মের নিয়ম কানুন পালন করবেন বলে জানান পার্নেল। একই সঙ্গে তার প্রতি আগ্রহ থাকায় ভক্তদের ধন্যবাদ জানিযেছেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ম্যানেজার মোহামেদ মোসাজি, যিনিও একজন মুসলিম। পার্নেলকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানোর পেছনে সতীর্থ হাশিম আমলা বা ইমরান তাহিরের কোনো হাত নেই বলে জানিয়েছেন মোসাজি। তিনি বলেছেন, "কয়েক মাস আগেই ওয়েন ইসলাম অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিযেছিল। এটা তার সিদ্ধান্ত, কিন্তু আমি নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে কিছু জানি না।"
নাম গোপন রাখার শর্তে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় জানান, নতুন ধর্ম অনুসরণের ব্যাপারটি পার্নেল খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। তারা আরো জানান, ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ টুর্নামেন্ট শুরুর পর থেকে মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ কোনো অ্যালকোহল স্পর্শ করেননি পার্নেল।
২০০৯ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই নিজেকে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে রেখেছেন পার্নেল। এর আগে ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়ে বোর্ডের নজরে আসেন এ পেসার। মাত্র ২০ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আসেন পার্নেল। পাকিস্তানের ক্রিকেটার ইউসুফ ইউহানার (মোহাম্মদ ইউসুফ) পর ওয়েন পার্নেল দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন। #

Thursday, 30 August 2012

কার্গুজারী-৪

ফরজ গোসল!

লিখেছেন: নীল ভোমরা

তিন দিনের জন্য তাবালীগে যাবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার...দীনের দাওয়াত দিতে আল্লার রাস্তায় তিন দিন! তবে এটি ধর্ম বিষয়ক কোন পোস্ট নয় বলে সে বিষয়ে বিষদ অবতারনা না করাই ভাল। তবে সব মিলিয়ে.... তাবলীগ-এর মুরুব্বীদের নিষ্ঠা, সততা ও বিশ্বাস দেখে আমি অবাক হয়েছি...শ্রদ্ধায় মাথা নত করেছি।

এবার কাজের কথায় আসি।

ওবায়েদ ভাই আমার পাড়ার বড় ভাই.... গতবার ভাল কোন ভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পাননি...এবার আবার আদা-জল খেয়ে লেখাপড়া করছেন, ভর্তি কোচিং করছেন! আর... আমি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় দিন গুনছি। দু'জনই তখন নিয়মিত আছর আর মাগরিব...এই দুই ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতে পড়ি... আর ভাল রেজাল্ট-এর জন্য আল্লাহ আল্লাহ করি!

এহেন আমরা দুই কুতুব.....পাড়ার এক মুরুব্বীর চোখে পরে গেলাম। একরকম বাধ্য হয়েই তিনদিনের জন্য তাবলীগে যেতে সম্মত হলাম। প্রথমে কাকরাইল মসজিদ..তারপর ঐ দিনই সন্ধ্যায় মানিকনগর জামে মসজিদ। আমি বলছি ১৯৮৩ সালের কথা.... তখন মানিকনগর এত জনবহুল এলাকা ছিলনা.... সবে আশ-পাশের এলাকা ডেভলপ হতে শুরু করেছে মাত্র।

প্রথম দিনেই কুলুখ নেয়ার কায়দাটা শিখে গেলাম! তারপর যথারিতী আছরের পর গাস্ত, মাগরেবের পর বয়ান, আর.... এশার পর তালীম। প্রথম দিনেই গাস্ত-এ গিয়ে মজার একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। তাবলীগ বিষয়ে যারা অবগত নন, তাঁদের জন্য এখানে একটু বলে নেয়া ভাল...... সাধারণতঃ আছর নামাজের পর তাবলীগের একটা দল দীনের দাওয়াত দিতে বের হয়। সারিবদ্ধভাবে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে চলে দলটা...একেই বলে গাস্ত-এ বের হওয়া। সারির একবোরে সম্মুখে থাকেন রাহুবার, যিনি একজন স্থানীয় বাসিন্দা এবং তিনিই এলাকার লোকজনকে মুতাকাল্লিম-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। মুতাকাল্লিম-এর কাজ হলো... পরিচয় পর্বের পর সেই লোককে ধর্মের কথা বলা এবং দীনের পথে আসতে আহবান (দাওয়াত) জানানো। আর সারির একবারে শেষে থাকেন দলের নেতা বা আমীর। তিনি সারির একেবারে পিছনে থেকে দলকে পরিচালনা করেন। আমীর যদি পেছন থেকে বলেন..'' বাঁয়ে চেপে চলি ভাই...ডানে কাঁদা''; তার মানে বুঝতে হবে... ডানে রাস্তা কর্দমাক্ত...আরও একটু বাঁয়ে চেপে হাঁটতে হবে।

প্রথম দিনের গাস্তের এক সময় হঠাৎ আমীর বল্লেন...'' ডানে না তাকাই ভাই"। তার মানে হচ্ছে ডানে তাকানো যাবেনা। কিন্তু আমি আঁড়চোখে ডানে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম...বোঝার চেষ্টা করলাম, হেতুটা কি?! দেখি....চমৎকার একটা সুন্দরী মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে! আমীর আরও উচ্চস্বরে বল্লেন...'' ডানে ফেতনা ফাতের.... ডানে না তাকাই ভাই''। আমি বুঝে গেলাম.... আমি যদি কোন কারনে মিস-ও করি, আমীর সাহেব এরকম আওয়াজ দিলেই ডান দিকে তাকাতে হবে...তাতে ফায়দা আছে!

আমার এই অবাধ্য আচরণের জন্য... রাতে আমীর সাহেব আমাকে আলাদা ডেকে নিয়ে কথা বললেন, আমাকে অবশ্য পালনীয় বিষয়ে আরও বিষদ বুঝানোর প্রয়াস পেলেন। আমি বল্লাম..'' হুজুর, ডানে না তাকানোর জন্য আপনি আহবান জানাচ্ছেন বটে...কিন্তু আপনি-তো ঠিকই দেখে নিচ্ছেন!" আমীর সাহেব রাগ করলেন না... আমার মত নালায়েক-কে দীনের পথে আনার জন্য তাঁর কি অসীম ধৈর্য! তিনি বল্লেন..."একবার দেখা জায়েয আছে"।

পরের দিন যথাসময়ে আবারও গাস্ত-এ বের হয়েছি! এবার আমি যা দেখার... একবারেই ভালভাবে দেখে নেবার নিয়ত পাক্কা করলাম.... একবার দেখা জায়েয! দেখার মত কোন কিছু যেন বাদ না যায়.... তজ্জন্য তৎপর হলাম! তাঁর কথার গলদ ফায়দা নেয়ায় আমীর সাহেব মাইন্ড করলেন.... কিন্তু কিছু বললেন না। গাস্ত থেকে ফিরেই তিনি এলান করলেন...... '' আগামী কাল নাদিম হবে মুতাকাল্লিম''।

আমি ধরা! কান্নাকাটি অবস্থা! ওবায়েদ ভাই-এর সাথে আলোচনা করে রাতেই ঠিক করে রাখলাম... দীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে কি কি বলা যেতে পারে।

আছর থেকে মাগরেব পর্যন্ত গাস্ত চললো... রাহুবার এক একজন করে স্থানীয় লোকজনের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। আমি পরিচিত হয়ে হাত মেলাই (হাত আর ছাড়িনা).....'' মাগরীব-এর পর ঈমান ও আখলাক-এর উপর জরুরী বয়ান হবে ভাই। আমরা সকলেই শরীক হওয়ার চেষ্টা করি.... আল্লাহ-কে যদি রাজি-খুশি করতে পারি, তবে আখেরে বহুত ফায়দা!''।

আমীর সাহেব আজ আমার উপর খুশি হলেন, বাহাবা দিলেন। নবীশ মুতাকাল্লিম হিসেবে পারফর্মেন্স তাহলে একবারে খারাপ হয়নি... আত্মতৃপ্তি অনুভব করলাম। মাগরেবের পর ভাল করে খেয়াল করলাম....বয়ানে উপস্থিত মুসুল্লীদের সবার চেহারা মোবারক খুঁটে খুঁটে দেখতে লাগলো আমার উৎসুক চোখ! আমার পারফর্মেন্সের আলটিমেট ফলাফল ...একবারে 'শুন্য"! যাদের আজ বিকালে দাওয়াত দিয়ে এসেছি...তাদের একজনও বয়ান শুনতে বসেননি! আমি হতাশ হলাম!

তিন দিন পার হয়ে গেছে। এশা'র পর তালীম শুনে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছি। কাল ফজর নামাজ পড়েই বাসায় ফিরে যাব। মসজিদের মেঝেতে চাদর বিছিয়ে কম্বল গায়ে ঘুমাতে একটু কষ্ট হলেও... খারাপ লাগতোনা। ওবায়েদ ভাই-এর সাথে টুক টুক করে গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। আশে পাশে কিছু একটা নড়াচড়ার শব্দেই ঘুম ভেঙেছে বুঝতে পারি। তখনও রাতের আকাশ অন্ধকার! আন্দাজ করি.... ভোর হতে এখনও খানিকটা বাকি। বাম দিকে পাশ ফিরে দেখি ওবায়েদ ভাই দাঁড়িয়ে উবু হয়ে কিছু একটা করছেন। অবাক হয়ে দেখলাম...ওবায়েদ ভাই মসজিদের মেঝেতে প্রথমে একটা গামছা পাতছেন, গামছার উপর দাঁড়িয়ে তারপর একটা লুঙ্গি পাতছেন। তারপর লুঙ্গির উপর দাঁড়িয়ে আবার গামছা পাতছেন...এবং এভাবে উনি মসজিদের মেঝেতে শরীর স্পর্শ না করে গামছা-লুঙ্গী, লুঙ্গী-গামছা করে মসজিদের দরজার দিকে গেলেন। তারপর দরজার ওপাশে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন। আমি অবাক তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে চেয়ে চেয়ে দেখলাম! ঘুমের ঘোরে ওবায়েদ ভাইয়ের অপকর্ম-টা যে কি হয়েছে...আমি তখনও ঠাওর করতে পারিনি! পাঁচ-সাত মিনিট পরে আমিও ওবায়েদ ভাইয়ের পিছু নিলাম।

মসজিদের টয়লেটের দিকটায় গিয়ে দেখলাম ....ওবায়েদ ভাই মাত্র গোসল করে গামছা দিয়ে শরীর মুছছেন। ৬০ ওয়াটের একটা ঘোলাটে বাল্বের আলোয় পরিস্কার দেখলাম.... প্রচন্ড শীতে তিনি ঠক-ঠক করে কাঁপছেন! শীতে খালি গায়ে জুবুথুবু অবস্থা...হুহুহু...কাঁপাকাঁপি! আমাকে দেখে অপ্রস্তুত হলেন। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইতস্তত ভঙ্গিতে অস্ফুট গলায় বললেন...'ফরজ গোসল'!

'ফরজ গোসল' কি জিনিস... এই শর্মা তখনও তা বোঝেই না! সেদিনই প্রথম শুনেছিলাম এই আজব কথাটা!

এখন বুঝি, শীতের সকালে... ফরজ গোসল.....কাহাকে বলে..কত প্রকার ও কি কি!?! সময় হলে.... আপনারাও বুঝবেন!

শুভ কামনা!

কবিতা-১

তাবলিগ তাবলিগ চলে..........



গাটলি মাথায়, পূটলি হাতে
ডেগ, পাতিল আর ডেগচি সাথে
কাতার ধরে পথের ধারে
যাচ্ছে ক’জন যিকির করে।

শহর কিবা গ্রামের মানুষ
গরীব, ধনী নেই কোন দোষ
শিক্ষিত বা মুর্খ সবে
এক কাতারেই চলতে হবে।

এই হলো ভাই তাদের নিয়ম
খাচ্ছেনা কেউ অধিক বা কম।
সবাই খাবে এক বাসনে
উদার মনে সরল প্রাণে।

মসজিদে মসজিদে হয় তারা মেহমান
থালা,বাটি, কম্বল লয়ে।
শীত কিবা গরমে, অসুবিধা চরমে
খুশি মনে নেবে তারা সয়ে।

পথে পথে হেটে যায়, সারাদিন কেটে যায়
মানুষের পিঠে হাত বুলিয়ে।
ঈমানের কথা বলে, মেহনতে কৌশলে
দুনিয়ার নেশা দেয় ভুলিয়ে।

সুমধুর বয়ানে, হ্রদয়ে বয়ে আনে
সততা, আদর্শের শিক্ষা ।
সত্যের পরিচয় হয় তাতে বিনিময়
প্রাণে প্রাণে ঈমানের দীক্ষা।

তুরাগ পারের ইজতেমায়
লক্ষ্য মানুষ হাত উঠায়।
চোখের পানি যায় ঝরে
মহান প্রভুর দরবারে।

সংগোপনে কাটতে শির
বদ দ্বীনী আর গোমরাহীর।
যায় ছড়িয়ে বিশ্বময়
লক্ষ তাদের বিশ্বজয়।

শহর নগর বন্দরে
ময়দানে আর অন্দরে ।
হক্বের দাওয়াত দেয় তারা
পথ খুঁজে পায় পথ হারা।

রাশিয়া, চীন,জাপান, ফ্রান্স, হিন্দুস্তান
আমেরিকা, বৃটেনের শিকড়ে।
চেয়ে দেখি হতবাক দ্বীন ঈমানের ডাক
চুপি চুপি ডুকে যায় কি করে?

এভাবেই একদিন বাতিল হবে বিলিন
হক্বের গাইবে গান সকলে।
যত হোক আধুনিক, আসবে দুনিয়া ঠিক
দাড়ি টুপি-ওয়ালাদের দখলে।

আইফেল টাওয়ারটা ভেংগে যাবে একদিন
হোয়াইট হাউসের ভিত কাঁপবে।
বাকিংহামের দ্বার হবে আল্লাহর
দিকে দিকে ইসলাম জাগবে।

কাব্যগ্রন্থ: লাল সাগরের ঢেউ-মুহিব খান

কার্গুজারী-৩

 মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় তাবলিগ জামায়াতের ৪২ মুসল্লি আহত 

মেহেরপুর প্রতিনিধি | তারিখ: ০৬-০৬-২০১০

মেহেরপুরে আজ রোববার ভোরে সড়ক দুর্ঘটনায় তাবলিগ জামায়াতের ৪২ জন মুসল্লি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদেরকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতেরা ও পুলিশ জানায়, ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে তাবলিগ জামায়াতের একদল মুসল্লি (রাজশাহী-ব-০২-০১৮১) নম্বর বাসে করে মেহেরপুর শহরের মারকাস মসজিদে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শহরে ঢোকার মুখে চাঁদবিল সড়কের কাদাযুক্ত মাটির পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করে যাওয়ার সময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে বাসটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুজন মুসল্লি সাইফুল ইসলাম ও মুহাম্মদ আলীকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বাড়ি ঢাকার দোহারে। আহত অন্যদের বাড়ি ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শরীয়তপুর জেলায়।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, গুরুতর আহত দুজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহতেরা সবাই শঙ্কামুক্ত।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ জিহাদ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মিরসরাইয়ে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাবলিগ জামাতের ১৩ সদস্য অজ্ঞান

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | তারিখ: ১৭-০৭-২০১০

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি মসজিদে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তাবলিগ জামাতের ১৩ সদস্য অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। মিরসরাইয়ের বারইয়াহাটের চান শাহ (রহ.) জামে মসজিদে আজ শনিবার দুপুরের খাওয়ার পরপরই সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাঁদের সবাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা হলেন সোহেল (১৮), চান মিয়া (৬০), আমজাদ আলী (৬২), জামাল উদ্দিন (৬০), শামসুল হুদা (৬১), শফিকুল ইসলাম (৪০), আবদুল মালেক (৫০), হামিদ আলী (৮০), খোরশেদ আলী (৬৫), সোহরাব আলী (৮৫), কাশেম আলী (৪৫), হরমুজ আলী (৮০), লোকমান আলী (৮০)। এদের সবার বাড়ি কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায়।জানা গেছে, ঢাকা থেকে তাবলিগ জামাতের ১৪ সদস্য দুই দিন আগে চান শাহ মসজিদে আসেন। আজ দুপুরে ভাত খাওয়ার পরপরই একে একে সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ১৪ জনের মধ্যে আংশিক সুস্থ রয়েছেন মো. হানিফ (৬০)। তিনি বলেন, দুপুরের রান্নার জন্য মাছ কাটার সময় অজ্ঞাত এক যুবক এসে বলেন, ‘আপনারা আমাদের মেহমান। আপনাদের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য।’ এরপর ওই যুবক মাছ কেটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। দুপুরের ভাত খাওয়ার পর সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আমি মাছ না খাওয়ায় সুস্থ আছি। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসি।’খবর পেয়ে হাসপাতালে যান মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবিরসহ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে অবস্থানরত তাবলিগ জামাতের সদস্যরা।স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তবারক উল্লাহ বলেন, বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

 সৌজন্যে

কার্গুজারী-২

আধুনিকতা ও আমাদের জীবনে ইসলামীক ভাবনা

লিখেছেন : প্রতিবাদী পথিক
আমার বাবাকে আমি কখনো নামাজ ‘না’ পড়তে দেখিনি। আর বাবারা যেখানে নামাজ পড়েন সেখানে অশিক্ষিত মায়েদের নামাজ না পড়ার কোন কারন নেই। মা-কে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘বাবা কখন থেকে নিয়মিত নামাজ পড়েন?’ উত্তরে মা বলেছিলেন যে তিনি বাবার ঘরে আসার পর থেকে এমনই দেখে আসছেন। উল্লেখ্য আমার মা-বাবার যখন বিয়ে হয় তখন মা’র বয়স বারো আর বাবার বাইশ।
সেই ছোট বেলায় একবার স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে বই পড়তে গিয়ে হাতের কাছে কোন বই না পেয়ে মা-কে বলে বাবার আলমারী খুলতে একটা বই হাতে চলে এলো। বইটির নাম ছিল, ‘মেরাজুল আশেকীন’। এই বইটিতে কোরানে উল্লেখিত আদম (আঃ) থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সকল নবী ও রাসুলের সংক্ষিপ্ত জীবনী, বেহেস্তের অনাবিল শান্তি ও দোজখের ভয়ানক আজাব, কোন কাজের কি পরিণাম, কি পরিমান পাপ বা পূণ্য এবং সেই পাপের শান্তি বা পূণ্যের পুরুস্কার আল্লাহ কি দিবেন ইত্যাদির বর্ণনা ছিল। তখন আমার মাত্র কৈশোর শুরু। ঠিকমতো বইটি হয়তো বুঝতেও পারিনি কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারছিলাম যে আমরা একসময় আল্লাহর কাছে ছিলাম এবং আবার এক সময় তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। এবং সেই ফিরে যাওয়াটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়। শেষ বিচার, পুল সেরাত, দোজখ আরো কতকিছু পার হয়ে যাওয়া। তবে যারা ঈমানদার হয়ে যাবেন তাঁদেরকে এ কঠিন কোন কিছুর মুখাপেক্ষী হতে হবে না। যেহেতু আমরা পৃথিবীতে এসে গেছি তখন শেষ বিচারের সেই ভয়ানক দিনে হাজির থাকতেই হবে - এতে সামান্যতম সন্দেহ নেই। এটা ‘ওয়ান ওয়ে’ রাস্তার মতো - মৃত্যুর পর ভুলটা হাতেনাতে বোঝার পর ফেরার কোন পথ নেই। আর এটা ভেবে আমার চোঁখ দিয়ে ভয়ে, শংকায় পানি এসে গিয়েছিল।
ছোট বেলায় মা বুঝিয়ে শুনিয়ে কিংবা জোর করে এলাকার মসজিদ ও মক্তবে ‘ইমাম বা মুয়াজ্জীন’ সাহেবের কাছে আরবী পড়তে পাঠাতেন। সেই সময় মা-র চেষ্টায় যতটুকু আরবী শেখা হয়েছিল তা-ই দিয়ে জীবনের এতটা সময় চালিয়ে নিয়ে আসলাম। জীবনে বড় হবার বাসনায়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেও শান্তি পেলাম না; পারি জমালাম অষ্ট্রেলিয়াতে উচ্চ শিক্ষা আর প্রতিষ্ঠার আশায়। তাই ধর্ম শিক্ষা বা চর্চাকে আর গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ধর্মটা হয়ে গেল অনেকের মতো আমার জীবনে পোষাকী; মন চাইলে পড়লাম নতুবা পড়লাম না। তবে হৃদয় মাঝে খচ্খচানিটা রয়েই গেল। পক্ষান্তরে হৃদয়ের সেই প্রোথিত বিশ্বাসেই হোক কিংবা মা-বাবার দোয়ার কারনেই হোক অথবা আল্লাহর অসীম রহমতেই হোক - এমন কোন অন্যায় জীবনে করতে হয়নি যা নিজেকে তাড়িয়ে বেড়ায়। শোকর আল্লাহর॥
অষ্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর তিন দিনের এক এজতেমা বা সমাবেশ হয়; যেখানে ইসলাম প্রাকটিশিং মনোভাবাপন্ন লোকজন ভীড় জমায়। ২০০৩ সালের এজতেমাটি হয়েছিল ‘মেলবোর্ণ’-এ। ওখানে যেয়ে এক বক্তার বক্তব্য শুনে মনে ভীষণ চাপ অনুভব করলাম। বক্তার নাম মাহবুব এলাহী রুমি। পুরো অষ্ট্রেলিয়ার ইসলামী বাঙালী সমাজে তাঁকে কেউ চেনে না বা তাঁর নাম শোনেনি এমন লোক পাওয়া যাবে না। তিনি পুরানো ঢাকার এক বনেদী পরিবারের সন্তান ও ধানমন্ডি বয়েজ, ঢাকা কলেজ এবং বুয়েট থেকে পাশ করা মেধাবী ছাত্র। এখানে এসে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েছেন। বর্তমানে ব্রিসবেনের গ্রিফিথ য়্যুনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। যদ্দুুর তার কাছে জানতে পারি তা হলো অষ্ট্রেলিয়ান প্রথম দিকের জীবনে সেও আমাদের মতো আধুনিক যুবক ছিলেন। কিন্তু কিছুদিনেই তার ভিতর পরিবর্তন আসা শুরু হয়। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘রুমি ভাই আপনার ভিতর এ পরিবর্তন কিভাবে শুরু হলো?’ উনি বলেছিলেন, ‘সর্বোপরি আল্লাহর ইচ্ছা আর আমার স্ত্রীর অনুপ্রেরণা।’ জীবনের সাফল্যে বা ব্যর্থতায় একজন স্ত্রীর কত ভূমিকা থাকতে পারে তা গল্প-উপন্যাসে অনেক পড়লেও রুমি ভাইকে দেখে মনে হয়েছে - এর চেয়ে বড় বাস্তব উদাহরণ আর কি হতে পারে! রুমী ভাবী যে অল্প শিক্ষিতা বা গরীব পরিবারের মেয়ে তা কিন্তু নয়। তাদের পরিবারও আর এক নামকরা বনেদী পরিবার আর রুমী ভাবীও আধুনিক শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিতা এক বাঙালী রমণী। তার চেয়েও বড় কথা মানুষের পরিচয় তার কাজে; বংশে নয়। হাদিসে এসেছে, ‘পৃথিবীতে সে-ই সুখী মানুষ যে চারটি জিনিস পায় ১. জিকিরকারী জবান (যার জিহ্বা আল্লাহর জিকির করে), ২. শোকরগুজারী দিল (যার অন্তর আল্লাহর প্রদত্ত সকল নেয়ামতের শোকর আদায় করে) ৩. কষ্টসহিষ্ঞু শরীর (আল্লাহর পথে ও আল্লাহর জন্য) এবং ৪. নেক্কার বিবি (যার স্ত্রী ইসলামিক সৎ জীবন যাপন করে)।’ সে অর্থে রুমী ভাই নিঃসন্দেহে একজন সুখী মানুষ। রুমী ভাই সেদিন তার বক্তব্যের মাঝে কোরানের একটি ছোট্ট সুরার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘আল্লাহকে বুঝতে চাইলে, ইসলামকে বুঝতে চাইলে এই একটি সুরা বুঝতে পারলেই যথেষ্ট।’
আমি জুলাই ২০০৫-এর মাঝামাঝি সিডনী ছেড়ে পাকাপাকিভাবে থাকার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ‘ব্রিসবেন’ আসি। আমি জানতাম রুমী ভাই ব্রিসবেন থাকেন এবং ‘হল্যান্ড পার্ক মসজিদ’-এ তার নিয়মিত যাতায়াত। আমি জানতাম যে কাউকে তার কথা জিজ্ঞেস করলে তার সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে পারব। কিন্তু আমার ইচ্ছে ওনাকে আমি মসজিদে ধরব। তখন অস্থায়ীভাবে আমি থাকা শুরু করেছি ‘ওয়েস্ট ইন্ড’-এর পাশের সাবার্ব ‘হাইগেট হিল’-এ। ২৯শে জুলাই শুক্রবার লাটহুইচ মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে অনির্দিষ্টভাবে ড্রাইভ করতে করতে বিকেলে পৌঁছলাম হল্যান্ড পার্ক মসজিদে। আছরের নামাজ শেষ হয়ে গেছে। মসজিদ খোলাই ছিল। আমি আছরের নামাজ আদায় করে সেলফ্ থেকে একটা ইসলামিক বই নিয়ে পড়তে বসলাম। ইচ্ছে মাগরিব আদায় করে বাসায় ফিরব। যেহেতু আমি নতুন তাই কাউকে চিনি না। রুমী ভাইকে চিনি কিন্তু তাঁকে মাগরিবের নামাজে মসজিদে পেলাম না। আশেপাশে কিছু বাঙালী মুখ দেখলাম কিন্তু নিজ থেকে পরিচিতি হবার ইচ্ছে হলো না। নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হতে যাচ্ছি এমন সময় মাঝ বয়স্ক এক ভদ্রলোক আমাকে সালাম দিয়ে প্রশ্ন করল, ‘আই থিংক ইউ আ নিউ হিয়ার। আই হেভন্ট্ সিন ইউ বিফোর। এনিওয়ে, হোয়ার আর ইউ র্ফম?’ আমার পরিচয় দিতেই উনি মসজিদে উপস্থিত দুইজন বাংলাদেশী বাঙালী সেলিম ভাই ও ডঃ শামসুল ইসলাম সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দু’জনেই জানতে চাইলেন আমার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। দু’জনকেই মনে হলো ইসলামে নিবেদিত প্রাণ। তারা আমার সাথে পরিচিত হওয়া ও কুশলাদী বিনিময়ের পড়ে যখন শুনলেন যে আমি ‘হাইগেট হিল’-এ থাকি তখন তারা আমাকে তাবলিগ-এর দাওয়াত দিলেন। তারা জানালেন পরের দিন অর্থাৎ শনিবার দশটা-এগারোটায় হলেন্ড পার্ক মসজিদ থেকে ওয়েস্ট ইন্ড মস্জিদে জামাত যাবে এবং থাকবে রবিবার মাগরিব পর্যন্ত। আমার যদি সময় থাকে যেন আমি ওনাদের সাথে সময় দেই। যেহেতু কোন কাজ ছিল না, তাই কথা দিয়ে আসলাম আমি যাব। যদিও বাংলাদেশ থেকেই তাবলিগের সাথে জড়িত লোকজনদের আমি খুব একটা ভালো চোখে দেখি না। কিন্তু চিন্তুা করলাম উল্টা-পাল্টা ঘুরে না বেরিয়ে মসজিদে সময় কাটানোতে লাভ বই তো লোকসান নেই। তারপরেও শনিবার সকালে শয়তানে পেয়ে বসল। উঠছি-উঠব করে বিছানা ছাড়লাম দুপুর বারোটার দিকে। যাচ্ছি যাব করে মসজিদে গেলাম প্রায় দেড়টার দিকে।
মসজিদের প্রবেশ করে দেখতে পেলাম চার-পাচঁজন লোক আর তাদের মধ্যে রুমি ভাই। রুমি ভাইকে এ্যাত একান্তে পাব এটা আমি ভাবতে পারিনি। কারন ২০০৩ - এর ‘মেলবোর্ণ এজতেমা'তে কিংবা ২০০৫-এর ‘সিডনী এজতেমা’তে তাকে পেয়েছিলাম শত শত ভক্তের মাঝে। ঐ দিন তার সামনে তাবলিগ জামাতের নিয়মানুযায়ী সুরা ফাতিহা ও কোরানের শেষ ১০টা সুরা পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম যে একটা সুরাও আমি পুরোপুরি শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে পারি না। উনি তখন কোরান, হাদিস বা ইজমা-কিয়াসের উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, ‘কোরাণ তেলাওয়াত করা সুন্নত; তবে কোরান পড়লে শুদ্ধ করে পড়া ফরজ আর তেলাওয়াত শোনা ওয়াজিব।’ তার এ কথা শুনে আমার শরীরে শিহরণ বয়ে গেল এ জন্য যে কত রাত জেগে জেগে রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল বা অন্য কত লেখকের লেখার ব্যাখ্যা মুখস্ত করেছি শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশের আশায়; সেখানে শেখার কোন কাপর্ণ্য ছিল না। পক্ষান্তরে ফরজের মতো বিষয়গুলোকে আমি কতটা হেলাফেলা করে দেখে এসেছি। আল্লাহ যে আমাদের সুস্থ, সবল করে তৈরী করেছেন আর আলো, বাতাস, অক্সিজেন, সুস্থ হার্ট, রক্ত সঞ্চালনসহ আরো কত কিছু যে বিনা পয়সায় এবং কষ্টহীনভাবে পেয়ে যাচ্ছি তার শুকরিয়া আদায় করি ‘পোষাকী’ নামাজ, রোজা আর লোক দেখানো দান-খয়রাত আর হজের মাধ্যমে। যদি খাদ্য কেনার মতো করে প্রতি নিয়ত অক্সিজেন কিনতে হতো, আলো-বাতাস কিনতে হতো কিংবা এগুলোর জন্য যদি পানি, গ্যাস বা কারেন্ট বিলের মতো মাস শেষে বিল দিতে হতো তবে আমাদের দশা কি হতো!! খাদ্যের সাথে তুলনা করে যদি অন্য বিষয়গুলিকে বিবেচনায় আনি তাতে তার প্রতিদান স্বরূপ যদি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ান্তে সারা জীবন নামাজে সেজদায় পড়ে থাকি তবুও তাঁর নেয়ামত বা পুরুস্কারের শুকরিয়া আদায় শেষ হবে না।
এটা গেল একভাবে ভাবা। এবার অন্য ভাবে চিন্তা করি। পৃথিবীটা ক্ষণস্থায়ী। পরকাল চিরস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী জীবনের কমপক্ষে ষোল থেকে বিশ বছর পড়াশোনা করে কোন মতে একটা চাকুরী যোগাড় করে জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কি পাই? হয়তো সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে কোন মতে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই। আর সন্তান-সন্ততি। তারপরেও ছেলেমেয়ে যদি ধর্মীয় চেতনায় শিক্ষিত না হয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তবে বাবা-মা’র ঠাই হয়ে যায় ‘ওল্ড হোম’ বা রাস্তায়। আর
সন্তান-সন্ততি যদি বখাটে হয়ে যায় তবে তো কথাই নেই। সূতরাং ষোল বা বিশ বছরের সাধনার ফলাফল কি দাঁড়ালো বিশাল এক ‘শূন্য’। সেই হিসাবে ভুল-ভাল সুরা আর কোরান পড়া, আর ‘পোষাকী’ নামাজ আদায় ও ধর্ম চর্চার মাধ্যমে আমরা কি ভাবে আশা করতে পারি যে তার প্রতিদান স্বরূপ অনন্তকালের জন্য আল্লাহ আমাদের বেহেশত দিয়ে দিবেন!!! এ্যাত অন্যায় বা অনিয়ম করার পরেও যদি আমরা বেহেশত্ আশা করি তবে তিনি দোজখ বানিয়েছেন কাদের জন্য!
পবিত্র কোরাণে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ আর আমরা যেন ইবাদত থেকে দূরে সরে না যাই তাই তিনি আমাদের জন্য এক লক্ষ চব্বিশ হাজার বা (মতান্তরে) দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর (নবী ও রাসুল) পাঠিয়েছেন। ১০৪টি আসমানী কেতাব পাঠিয়েছেন। তারপরেও আমরা আল্লাহকে ‘ব্লেম’ দেই বা দোষারোপ করি। এরপরেও কি আমরা আশা করতে পারি যে আল্লাহ আমাদের শাস্তিহীনভাবে স্বর্গে পাঠাবেন?
বাংলাদেশে বসে ওয়েষ্টার্ণ জীবনকে কত সুন্দর ভেবেছি। ভাবতাম ওদের মতো সুন্দর, ভালো মানুষ বুঝি আর দুনিয়াতে নেই। অষ্ট্রেলিয়া আসার পর যেটা বুঝতে পারলাম; তা হলো - ‘নদীর ওপারে সব সময়ই সব সুখ বিরাজ করে।’ কোন স্ত্রী কি চায় তার স্বামী অন্য কোন মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করে বেড়াক কিংবা কোন পুরুষ কি চায় তার স্ত্রী অন্য কোন ছেলের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখুক। আমাদের কালচারে তো প্রশ্নই আসে না। এদের কালচারেও এরা আশা করে না। প্রশ্ন হলো, যে সমাজ ব্যবস্থায় ছেলে মেয়ে ১৮ বছর পার হলে পায় অবাধ সেক্সের স্বাধীনতা। এই অবাধ সেক্সের কারনে অ্যাবরশন তো পান্তা ভাত। তারপরেও অনেকে সন্তান নিয়েও নেয় কিন্তু লিভ টুগেদারের মাধ্যমে প্রাপ্ত সন্তানের প্রতি ভালোবাসা লিভ টুগেদার শেষ হবার সাথে সাথে নিঃশেষ হয়ে যাওয়াই তো স্বাভাবিক। ফলে এই সকল সন্তান মা-বাবার আদর সোহাগের বাইরে বেড়ে ওঠে। যে সন্তানের জন্মটাই হয়েছে ‘কামনা’ থেকে সেই সন্তানকে কে সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার ভালোবাসা দিবে?? তাছাড়া এ ভালোবাসা সন্তানকে একমাত্র মা-বাবাই দিতে পারেন; অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যৌবনের শুরু থেকেই যারা অবাধ সেক্সে বেড়ে উঠেছে তারা কিভাবে বিয়ের পর এক পুরুষ বা এক নারী নিয়ে সুখে থাকবে???
এখানে সেক্স এত অবাধ যে মা ও মেয়ের সাথে একই লোকের সেক্সের ঘটনা খুবই সাধারণ। বাবা-মেয়ে বা মা-ছেলের সাথে সেক্স হয়ে যায়। যদিও এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়; তবুও হয়েছে। অ্যালকোহল পেটে পড়লে আর জড়াজড়ি করলে কতক্ষন মাথা ঠিক থাকে!!!
যে দেশগুলিতে কাপড় খুলে ন্যুড পার্কে অবাধে যেয়ে আদিম প্রবৃত্তিতে মেতে ওঠা যায়। যে দেশে ব্যাক্প্যাকারে পরিচিত বা অপরিচিত ছেলেমেয়ে এক সাথে থাকে। ইচ্ছে হলেই সেক্স করে আবার সকালে যার যার মতো চলে যায়; কেউ কাউকে মনেও রাখে না।
যে দেশে অপরাধের মুল কারণ অ্যালকোহল। একদিকে অ্যালকোহল (মদ), ক্যাসিনো (জুয়া), স্কট (কর্ল গার্ল)’র অবাধ প্রচারণা আবার অন্যদিকে এগুলো না করার জন্য বিধিনিষেধ। সে দেশে কি সুষ্ঠু কোন সমাজ ব্যবস্থা থাকতে পারে? যেটা আছে সেটা বাহ্যিক; মাকাল ফলের মতো।

দাওয়াত, তাবলিগ ও আধুনিক প্রযুক্তি


দাওয়াত, তাবলিগ ও আধুনিক প্রযুক্তি
  মুফতি জহীর ইবনে মুসলিম
দাওয়াত ও তাবলিগ ইসলামের অন্যতম কর্মসূচি। এই দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটে। মুসলিম উম্মাহ লাভ করে বিস্তৃতি। নির্মিত হয় ইসলামী সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। ইসলামকে বিজয়ী সভ্যতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে দাওয়াত ও তাবলিগের কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম দাওয়াত ও তাবলিগ অনুশীলনের প্রেরণা জোগায়, ইসলাম কায়েমের পথ করে সুগম। তাবলিগ ও দাওয়াতের মাধ্যমে জাহেলিয়াতের আঁধার কেটে সত্য ও ন্যায়ের সোনালি সূর্যের উদয় ঘটে। দাওয়াত ইসলামের পূর্ণাঙ্গ রূপ তুলে ধরে। দাওয়াত মানে সত্য অনুশীলনের দিকে ডাকা। দাওয়াত মানবতার মুক্তির কথা বলে, কল্যাণের কথা বলে। ইহকাল ও পরকালের সার্বিক কল্যাণের দিকে ডাকাই হলো দাওয়াত। তাবলিগ জামাতের প্রাণপুরুষ হজরতজি ইউসুফ (রহ.) দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, ইমান সম্পর্কে বোঝানোর নাম দাওয়াত আর আমল সম্পর্কে বোঝানোর নাম তাবলিগ। দাওয়াত ছাড়া তাবলিগ করলে কোনো লাভ হবে না; বরং বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে হুজুর (সা.) এক যুগে কেবল দাওয়াত দিয়েছেন কিন্তু তাবলিগ করেননি। তারপর তিনি বলেছেন, দাওয়াতের উপাদান প্রধানত ১০টি। যথা_আল্লাহর বড়ত্ব, আল্লাহর কুদরত, আল্লাহর বিশালত্ব, মৃত্যু, কবর, হাশর, মিজান, পুলসিরাত, জান্নাত ও জাহান্নাম (হজরতজির স্মরণীয় বয়ান)।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানী আল্লামা ইবনে খালদুন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'মুকাদ্দামায়ে ইবনে খালদুন'-এ লিখেছেন, বস্তুত কোনো ধর্মীয় জনগোষ্ঠী তিনভাবে বিস্তৃতি লাভ করে_এক. স্থানান্তর বা মাইগ্রেশনের মাধ্যমে; দুই. জন্ম ও বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে এবং তিন. ধর্মান্তরের মাধ্যমে। মুসলিম উম্মাহর বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণ এই তিন উপায়ে হচ্ছে। যাওয়াত ও তাবলিগ এই বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণের প্রক্রিয়াকে সুগম ও সুন্দর করে। দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে সব জাতিতে, সব বর্ণে, সব দেশ ও অঞ্চলে ইসলামের চিরসুন্দর ও আদর্শমণ্ডিত বাণী পেঁৗছে যেতে পারে। ইসলাম দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে সর্বত্র তার অবস্থান করে নিতে পারে। অতীতে তা-ই হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে। ইসলাম শূন্য থেকে শুরু হয়েছে, কিন্তু দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে তা আজ মহীরুহের রূপ ধারণ করেছে। দাওয়াত ও তাবলিগের ব্যাপকতা বাড়ালে উম্মাহর অভ্যন্তরীণ সংহতি ও বাইরের সম্প্রসারণ দ্রুত সম্ভব। একক সভ্যতা হিসেবে ইসলামের উত্থান ঘটাতে হলে উম্মাহকে আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। আর এ জন্য দাওয়াত ও তাবলিগের কোনো বিকল্প নেই। বলতে গেলে দাওয়াত, তাবলিগ ও ইসলামের সম্প্রসারণ, বিস্তৃতি এক সূত্রে গাঁথা।
আমাদের অনেকেরই ধারণা, বিশেষ পদ্ধতিতে দাওয়াত দেওয়াই কেবল তাবলিগ। এই বিশেষ পদ্ধতিই একমাত্র সুন্নাহ স্বীকৃত। কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশেষভাবে দাওয়াত দেওয়াই কেবল রাসুল (সা.)-এর তরিকা, অন্য কোনো পন্থায় দাওয়াত দেওয়া, তাবলিগ করা স্বীকৃত নয় বলে কারো কারো ধারণা। কিন্তু রাসুলে করিম (সা.)-এর বাস্তব কাজ তা বলে না। নবুওয়াতপ্রাপ্তির প্রথম তিন বছর তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, আবার যখন প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার পরিবেশ হলো, তখন তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। আল্লাহ তায়ালা যখন নির্দেশ দিলেন, 'তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করো আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুগত, তাদের জন্য তুমি তোমার পক্ষপুট অবনমিত করো' (সুরা সুয়ারা, আয়াত ২১৪-১৫), তখন রাসুল (সা.) হজরত আলী (রা.)-এর মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের সম্মানে এক ভোজসভার আয়োজন করেন। তাতে তাঁর নিকটাত্মীয়দের প্রায় ৪০ জন উপস্থিত হন। ভোজের পর তিনি মেহমানদের সামনে সত্যের দাওয়াত পেশ করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আবু লাহাবের চক্রান্তে দাওয়াতদানের পরিবেশ বিনষ্ট হয়। ফলে সেদিন তিনি দাওয়াত দিতে পারলেন না। পরে তিনি আরেকটি ভোজসভার আয়োজন করেন এবং সেখানে আবু লাহাবকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ত্বরিত তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। তাঁর দাওয়াত তুলে ধরেন আমন্ত্রিত মেহমানদের সামনে ('আল বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া', তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫)। এখানে মূলত দাওয়াতদানের জন্য ভোজসভার মতো একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের তিনি ব্যবস্থা করেন। ভোজসভা ছিল উপলক্ষ, লক্ষ্য ছিল দাওয়াত ও তাবলিগ।
প্রকাশ্যে ও জনসমক্ষে তাঁর দাওয়াত পেশ করার জন্য তিনি তৎকালীন মক্কায় প্রচলিত একটি পদ্ধতি কাজে লাগান। সে সময় মক্কায় নিয়ম ছিল, কোনো শত্রু সম্পর্কে সতর্ক বা কোনো বিপদ-আপদ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মক্কাবাসীকে অবহিত করার জন্য সাফা পর্বতে আরোহণ করে মক্কাবাসীকে আহ্বান করতে হতো। নবীয়ে করিম (সা.) তাঁর দাওয়াত বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে পেশ করার জন্য এ পন্থা অবলম্বন করেছিলেন ('আল বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া')।
ঠিক এমনিভাবে মহানবী (সা.) ওকাজ মেলার সমাবেশ, হজের মৌসুমকেও তিনি দাওয়াতদানের জন্য কাজে লাগান। পরে তিনি পত্রের মাধ্যমে সে সময়ের রাজা-বাদশাহ ও রাজন্যবর্গকে ইসলামের দাওয়াত দেন। দাওয়াতসংবলিত পত্র দিয়ে তিনি বিভিন্ন দেশে দূত পাঠান। বস্তুত সমকালীন যুগের সব বৈধ ও নির্দোষ পদ্ধতিই তিনি তাঁর দাওয়াত ও তাবলিগের জন্য ব্যবহার করেন। যখন যে পদ্ধতি কার্যকর, উপযুক্ত ও ফলপ্রসূ বিবেচিত হয়েছে, তখন সে পদ্ধতিই তিনি অবলম্বন করেছেন। আজকের যুগেও দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য, সত্য তুলে ধরার জন্য প্রচলিত সব বৈধ পদ্ধতি ও উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা দরকার। একক যোগাযোগ, সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় জ্ঞান, পাঠদান, লেখনী, বক্তৃতা, পত্রপত্রিকা, রেডিও, কম্পিউটার প্রযুক্তি_সবই দাওয়াত ও তাবলিগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা প্রয়োজন।
এসব পদ্ধতিতে কোনো একটার মাধ্যমে যাঁরাই দ্বীনের কথা বলছেন, ইসলামের প্রচার-প্রসারের চেষ্টা করছেন, তাঁরা সবাই দাওয়াত ও তাবলিগ করছেন।
দাওয়াতি কর্মসূচি ও কাজকর্মে সমকালীন অবস্থার প্রতিফলন ঘটতে হবে। হজরত নবী করিম (সা.)-এর দাওয়াতি কর্ম ও বক্তব্য থেকে তা-ই বোঝা যায়। নানা সংকটের আবর্তে বর্তমান মুসলিম বিশ্ব, নৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বহু ক্ষেত্রে সংকট প্রলম্বিত। এসব সংকট ও সমসাময়িক ইস্যুগুলো এড়িয়ে গেলে আমরা মনে করি দাওয়াতের পূর্ণতা আসবে না। ধর্মীয় সচেতনতাসহ নৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি দাওয়াতের লক্ষ্য। বর্তমান মুসলিম উম্মাহর জাগরণে ও সংকট উত্তরণে দাওয়াত ও তাবলিগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের পথ হতে পারে সুগম। আজকের মুসলমান বিশ্বের সংকটময় পরিস্থিতি ও সাম্রাজ্যবাদের পরিপ্রেক্ষিতে গোটা মানবতার, বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহর মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের দাওয়াত ও তাবলিগের কর্মসূচিকে আরো জোরদার করতে হবে। এটাই সময়ের দাবি।

কার্গুজারী-১

তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে টাঙ্গাইলে সাকলাইন



নিজস্ব প্রতিনিধি
বার্তা২৪ ডটনেট
ঢাকা, ২২ আগস্ট: ঈদের ছুটিতে তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে টাঙ্গাইল গেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পিন কোচ পাকিস্তানের সাবেক স্পিনার সাকলাইন মুস্তাক।

জাতীয় ক্রিকেট দলের স্পিন কোচ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ঈদের কয়েক দিন আগে। তবে ঈদের ছুটি কাটাতে ইংল্যান্ডে পরিবারের কাছে যাননি তিনি।

আসা-যাওয়ার বিমান ভ্রমণে সময় বেশির ভাগই শেষ হয়ে যাবে এ কারণেই ইংল্যান্ড যাওয়া হল না। ঢাকাতেই ঈদের নামাজ আদায় করলেন সাকলাইন। কিন্তু ঈদের পর ২৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা অলস সময় কি করে কাটাবেন! এমনটা ভাবনায় ছিল সাবেক তারকা ক্রিকেটারের। তিনি কিন্তু ঈদের পর কি করে সময় কাটাবেন তা আগেই ঠিক করে রেখে ছিলেন।

তাবলিগ জামাতে যারা নাম লিখিয়েছেন তারা আর যাই হোক অলস সময় কাটাতে রাজী নন। সাকলাইন মুস্তাকও তাই। ঈদের পর পরই সাকলাইন ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইল চলে গেলেন তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে। এ তথ্য বিসিবির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।

তবে সূত্রটি সাকলাইন টাঙ্গাইলের কোন মসজিদে গেছেন তা জানা যায়নি।

২৫ আগস্ট জাতীয় ক্রিকেট দলের অনুশীলন আবার শুরু হবে। এর আগেই সাকলাইন ঢাকায় চলে আসবেন বলে জানা গেছে।

ঈদের দিন সকালে সাকলাইনের সঙ্গে কথা হয় জাতীয় দল নিয়ে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “১৯৯৯ সালের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ বিস্তর ফাঁরাক। এখনকার দলটিতে অনেক বেশি পরিণত। আর এই দলে আছে অনেক বেশি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার।”

বাংলাদেশ কি কখনও বিশ্বকাপের ট্রফি জয়ী হতে পারবে? প্রশ্ন শুনে সাকলাইন হেসে দিয়ে বলেন, “বিশ্বের অন্যান দলের ক্রিকেটাররা যেমন মানুষ এদেশের ক্রিকেটাররাও মানুষ। বাংলাদেশ দলটি এখন উন্নতির পথে। হয়তো কিছু সময় লাগবে। তাই বলে বিশ্বকাপ জয় করাটা অসম্ভব কিছু নয়। বিশ্বকাপ তো মানুষই জয় করেছে রোবট নয়।”

উল্লেখ্য, জাতীয় ক্রিকেট দল টি২০ বিশ্বকাপে অংশ নিতে দেশ ছাড়বে ৩০ আগস্ট। তবে এই সফর শ্রীলঙ্কা যাবার জন্য নয়। জাতীয় ক্রিকেট দল বিসিবি একাদশের আড়ালে ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাকোতে চার জাতি টি২০ সিরিজে অংশ নিতেই ৩০ আগস্ট দেশ ছাড়বে। সেখান থেকে সরাসরি কলম্বোর উদ্দেশে দল রওয়ানা হবে। এ হিসাবে ৩০ আগস্ট মুশফিক বাহিনীর বিশ্বকাপ টি২০-র মিশন শুরু।

বার্তা২৪ ডটনেট।

দাওয়াত ও তাবলীগ এর শতবর্ষ পূর্তি : শেখার আছে অনেক কিছু





আমার দেশ থেকে সংগ্রহিত :
৫০তম বিশ্ব ইজতেমার ১ম অংশ ২০১৩ সালের ১১১২১৩ জানুয়ারি এবং ২য় অংশ ১৮১৯২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহবিশাল এ জনসমাবেশ সম্পর্কে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষসহ সারা দুনিয়ার মুসলিম সমাজের আগ্রহের কমতি নেইমিডিয়ার কল্যাণে এখন এ সমাবেশের কথা বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হচ্ছেতাবলিগ জামাতের এ সমাবেশ ছোট আকারে শুরু হয়েছিল ঢাকার কাকরাইল মসজিদেকেন্দ্রস্থল কাকরাইল মসজিদ, তবে বার্ষিক সমাবেশের স্থান গড়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরের বিশাল প্রান্তরেতাবলিগ জামাতের বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমা নিয়মিতভাবে টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হলেও তাবলিগের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ভারতের রাজস্থান রাজ্যের মেওয়াত নামক এলাকা থেকেমাওলানা ইলিয়াছ (রহ.) ১৯১০ সালে এ কাজের সূচনা করেছিলেনপরে তাঁর পুত্র মাওলানা ইউসুফ (রহ.) এবং মাওলানা জাকারিয়া (র.)-এর নেতৃত্বে এ কাজ বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হয়েছেতাবলিগ মূলত প্রচারের কাজদীনের দাওয়াত নিয়ে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে, বিশেষ করে মুসলিম সমাজের ঘরে ঘরে পৌঁছানোই আল্লাহর রাহে তাঁদের নিঃস্বার্থ কাজতবে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁরা ভাবাদর্শিকভাবে প্রচারবিমুখনীতিনির্ধারক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকদের তারা মুরব্বি বলেন তাবলিগের মুরব্বি কে বা কারা সেটা কোনো গোপন বিষয় নয়জোরালো অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় চলে তাঁদের সংগঠন, নীতিনির্ধারণ ও নেতৃত্ব দানের কাজকিন্তু কে নেতা আর কে কর্মী, কার কী অবদান, কার গুরুত্ব কতখানি, কে আগে, কে পরে, কার নাম প্রকাশ পেয়েছে, কার নাম প্রকাশ পায়নিএসব বিষয়ে তারা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে নির্মোহ ও নির্লিপ্ত
আধুনিককালের এই প্রচারসর্বস্বতার জোয়ারের ভেতর তাঁদের এই ভাবাদর্শিক অবস্থানটিও যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ তাবলিগ জামাত যতদিন তাদের এই ভাবাদর্শিক অবস্থানটি আন্তরিকভাবে ধরে রাখতে পারবে, ততদিন মানুষের শ্রদ্ধার স্থল হয়ে থাকবে নিশ্চয়তাবলিগ শব্দটির অর্থ হচ্ছে পৌঁছে দেয়াইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য
ইসলামের আদেশ-নিষেধ ও ধর্মীয় শিক্ষাকে শুধু বই পুস্তক পড়া বা ওয়াজ-নসিহত শোনার মাধ্যমে নয়; বরং বাস্তব জীবনাচরণের ভেতর দিয়ে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার একটি পদ্ধতিএর অন্যতম প্রধান সাংগঠনিক কাজ হচ্ছেচিল্লাঅর্থাত্ ৪০ দিনের জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে তাবলিগের কাজে বের হয়ে যাওয়াআল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া এই দল ইসলামের শিক্ষা দাওয়াত নিয়ে চলে যায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, শহর থেকে শহরান্তরে এবং দেশ থেকে দেশান্তরে৪০ দিনের জন্য বা তিন চিল্লায় ১২০ দিনের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যান; কিন্তু তাঁরা বনে যান না বা আত্মগত তপস্যায় নিমগ্ন হন নাতাঁরা যান লোকালয়ে সমাজের ভেতরেসেখানে তাঁরা শুধু মানুষকে শেখাতে যান না, নিজেরা শিখতে যান
তাবলিগের চিল্লায় যেতে হয় নিজের পয়সা নিয়ে, বিপদাপদে ধারদেনা পাওয়া যেতে পারে; কিন্তু কোনো দান-খয়রাত গ্রহণ করার সুযোগ নেইঅপরদিকে যাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে যাওয়া হবে তাঁদের কোনো দান- খয়রাত দেয়ার অনুমতি নেই
আত্মনিবেদনের মাধ্যমে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণের জন্য সমাজের ভেতরে বিচরণ, এটা তাবলিগের এক মহান শিক্ষাএ শিক্ষাকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে মানব সমাজের জন্য তাবলিগ নিঃসন্দেহে মহত্ ভূমিকা পালন করবে

এক অন্যরকম আয়োজন
ইজতেমার পরিধি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে তা হচ্ছে এর গ্রহণযোগ্যতা, নিয়ম-শৃঙ্খলা, চেতনা সহনশীলতা, কর্মসূচি সর্বজনীনতা ও সাংগঠনিক কৌশলইজতেমা মূলত একটি ধর্মীয় সমাবেশ এবং একটি নির্দলীয়, অর্থাত্ অরাজনৈতিক দলের বার্ষিক সম্মেলনরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ সম্মেলনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছেএতবড় একটি মহাসমাবেশ, অথচ এর জন্য নেই কোনো অর্থ সংস্থানঅর্ধকোটি মানুষের চার-পাঁচদিন থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক কাজসব মিলিয়ে অনেক ঝক্কি-ঝামেলাকিন্তু এ নিয়ে আয়োজকদেরও নেই তেমন কোনো টেনশনসত্যিই ভাবতে অবাক লাগে, কোনো ফান্ড ছাড়াই স্বেচ্ছাশ্রমে এবং স্বপ্রণোদিত দানের ভিত্তিতে কি করে হচ্ছে সবকিছু! ১৬০ একর এলাকা জুড়ে যে বিশাল ছাউনি তৈরি হয় তিন মাস ধরে, তাতে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করতে হয় নাশিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সের লোক মাঠের কাজে যোগ দেয়পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া এমন ছাত্রও রয়েছে যে শিশুটি বাসায় এক গ্লাস পানি নিজে জগ থেকে নিতে চায় না, সে শিশুটি ইজতেমা মাঠে বাবার সঙ্গে শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ছেকাঁধে বাঁশ নিয়ে হাসিমুখে হেঁটে যাচ্ছেইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বাথরুম তৈরিতে যাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশই প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
প্রতি বছর ইজতেমায় আসেন পাঁচ-সাত হাজার বিদেশি মেহমানএবার আসলেন প্রায় ২০-২৫ হাজারতাঁদের একেকজনের খাবার একেক রকমআরবীয়রা যা খান, ইংরেজরা তা খান নাতাঁদের রুচি ও ইচ্ছার প্রতি লক্ষ্য রেখে ইজতেমায় রান্না হয় হরেক রকম খাবারএসব খাবার জোগান দিতে কোনো সমস্যাই হয় নাতাবলিগের অনেক মুসল্লি আছেন, যাঁরা বিদেশি মেহমানদের খেদমতের (বিদেশি মেহমানদের নছরতের জন্য) অপেক্ষায় থাকেন সারা বছরবিদেশিরা এ দেশের মেহমানদারিতে সন্তোষ প্রকাশ করেনইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী পরিণত হয় ধর্মীয় উত্সবের নগরীতেপ্রতিটি বাসা-বাড়ি, কারখানার শ্রমিক, কলোনিসবখানেই অতিথির আগমন ঘটেইজতেমায় কয়েকদিন এখানকার সবাইকে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকতে হয়যাঁরা জামাতবদ্ধ হয়ে আসেন, শুধু তাঁদের জন্যই নির্ধারিত খেত্তায় স্থান বরাদ্দ রাখা হয়তিনদিন কষ্ট সহ্য করে ধর্মের কথা শুনতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে এখানে বসে থাকেন ছোট বালক থেকে বৃদ্ধরাস্বউত্সাহে দ্বীনি জজবায় উজ্জীবিত হয়ে ছামানাপত্রসহ চলে আসেন ইজতেমায়ষাটোর্ধ্ব এক প্রবীণ জানালেন, তাবলিগ জামাতের আধ্যাত্মিকতার বেশ চমকপদ কাহিনীতিনি ৩০ বছর ধরে তাবলিগের সঙ্গে জড়িততিনি বলেন, জীবন যৌবন সব কিছুই আল্লাহর দেয়া আমার বলতে কিছুই নেই, বউ-বাচ্চা সবই আল্লাহরনেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ২নং ইউনিয়ন জিম্মাদার জনাব আবদুর রাজ্জাক বলেন, জানা আল্লার দেয়া; আল্লার দেয়া মাল নিয়ে তারই রাস্তায় বের হয়েছি এতে কষ্ট কি? নবীজি এক টুকরো খেজুর খেয়ে রাতের পর রাত দিনের পর দিন অতিবাহিত করে তৌহিদের (দ্বীনের) দাওয়াত দিয়ে গেছেনআর আমরা তো সেই নবীর উম্মতজান্নাতে চিরস্থায়ী সুখী হওয়ার জন্য ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়াতে আমরা কিছুটা কষ্ট করতে পারি না? এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রাজ্জাক জানান, এই কাজ (তাবলীগের দাওয়াত) বড় উঁচু কাজএই কাজ করে গেছেন নবী-রাসুলরাদুনিয়ার সব মানুষই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, শুধু তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, তার নবীর প্রতি এবং যারা সত্কর্ম করেতিনি বলেন, তাবলীগের কাজে সময় ব্যয় করতে করতে আল্লাহর রাস্তায় থেকেই যেন আমার মৃত্যু হয়কারণ, আল্লাহর পথে দ্বীনের দাওয়াত অবস্থায় মৃত্যু হলে এটা হবে সৌভাগ্যের, ঈমানী মৃত্যু, ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের চোখে-মুখে থাকে না কোনো বিরক্তি, নেই কোনো হতাশা অথবা আয়োজকদের প্রতি কোনো অভিযোগ
সবার মুখে আল্লাহ আল্লাহ জিকিরশাখা সড়কের পাশে স্বেচ্ছাসেবকরা দাঁড়িয়ে শুধু বলেন, ‘যার যার ডাইনে চলি ভাই, জিকিরে জিকিরে চলি ভাই
দেশ-বিদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের আগমন ঘটেকিন্তু কেউ নিজের পরিচয়টুকু প্রকাশ করেন নামন্ত্রী, এমপি সবাই সমানতাঁরা বয়ান করেন শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেতাঁদের বয়ানে কাউকে কটাক্ষ করে কিছু বলা, কাউকে প্রশংসা করে কিছু বলার সুযোগ নেই

শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য
তাবলিগ আন্দোলনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো রাসুলের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরাএখানে সুন্নাহ পালনের জন্য কোনো জবরদস্তি করা যায় নাবরং নবীর জীবনচরিত নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করে তাঁর প্রতি বিশেষ মহব্বত সৃষ্টি করা হয় তাবলিগেযাঁরা তাবলিগ করেন, তাঁরা তাবলিগ থেকে ফিরে এসে রাজনীতি করতে পারেনকিন্তু তাবলিগে গিয়ে রাজনীতি করা নিষিদ্ধতাই সব দলের অনুসারীরা তাবলিগে অংশ নেনইসলাম ধর্মে নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা ফেরাউন-নমরুদের প্রকৃতি
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দেখা গেছে, নেতৃত্ব নিয়ে তাবলিগের কোনো সঙ্কট নেইতাবলিগের সাফল্য নেতার ওপর নির্ভরও করে নানেতা দুর্বল বা অসুস্থ হলেও তাবলিগের কাজে ব্যাঘাত হয় না এটি একটি সুশৃঙ্খল আন্দোলন বিধায় অনুসারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো শাস্তি বা সমালোচনা নেইএ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় সেবা, সম্মান এবং ভালোবাসার মাধ্যমেআমিরের অনুমতি ছাড়া কেউ বাইরে যেতে পারেন নাকিন্তু কেউ তা লঙ্ঘন করলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না লঙ্ঘনকারীর অন্তরকে পরিবর্তন করা হয় আলোচনা, সম্মান ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে
তাবলিগে যারা নতুন যোগ দেন তাঁদের প্রথমই বলে দেয়া হয়, দুনিয়ায় তাবলিগের কাজের পরিধি হলোজমিনের নিচে এবং আসমানের ওপরেআসমানের ওপরওয়ালার সন্তোষ হাসিল করে জমিনের নিচের জিন্দেগি অর্থাত্ মৃত্যুর পরের জিন্দেগিকে সুন্দর করাই এর মূল লক্ষ্যতাবলিগের মুরব্বিরা সাফল্যের জন্য সব সময় আল্লাহর ওপর নির্ভর করেন এবং তাঁর সাহায্য কামনা করেনতাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের আমলের পুরস্কার একমাত্র আল্লাহতায়ালার কাছে কামনা করেন

তাবলিগ জামাত ও বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস
১৯১০ সালে ভারতবর্ষের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুসলিহে মিল্লাত মাওলানা ইলিয়াছ কান্ধলভী (রহ.) তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন রাজস্থানের মেওয়াত নামক এলাকা থেকেমৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিজেই এ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়েছেনতাঁর জীবদ্দশায়ই এ মহত্ কার্যক্রম ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে১৯৪৪ সালে মাওলানা ইলিয়াছের (রহ.) মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী (রহ.) তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেনএ সময় শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভীও এ কার্যক্রমের প্রাণপুরুষ ছিলেনমাওলানা এনামুল হাসান (রহ.) পরবর্তী সময়ে তাবলিগ জামাতের অন্যতম আমির বা নেতা ছিলেনবাংলাদেশে তাবলীগ জমাতের আজীবন আমির ছিলেন মাওলানা আব্দুল আজিজ (রহ.)তিন-চার দশকের মধ্যেই তাবলিগের কার্যক্রম সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তার লাভ করে এবং ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েঢাকার কাকরাইল মসজিদে ১৯৪৬ সালে প্রথম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়কাকরাইল মসজিদকে তাবলিগের মারকাজ মসজিদ বলা হয় ১৯৪৮ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে১৯৬৫ সালে টঙ্গীর পাগার নামক স্থানে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়সেখানেও জায়গা সঙ্কুলান না হলে ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পূর্ব তীর অর্থাত্ বর্তমান স্থানে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়রাজধানীর উপকণ্ঠে শিল্প শহর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত তিনদিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার সফল সমাপ্তি ঘটেবিশ্ব ইজতেমা এবং দেশের সর্ববৃহত্ ধর্মীয় সমাবেশস্থলে পরিণত হয়১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার টঙ্গীর ইজতেমা স্থলের জন্য সরকারি জমি প্রদান করেন১৯৯৬ সালে তত্কালীন সরকার এ জায়গায় ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়
তাবলিগে বাহ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয় খাস নিয়তের উপরচিল্লা হচ্ছে তাবলিগ কার্যক্রমকে সংগঠনবদ্ধ বা শৃঙ্খলাবদ্ধ করার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজবছরে একচিল্লা এবং জীবনে অন্তত তিন চিল্লা দেয়ার জন্য সাধারণভাবে সব মানুষকে অনুপ্রাণিত করা হয়যারা আপাতত চিল্লায় যেতে পারছেন না, তাদের জন্য এক সপ্তাহ, তিনদিন বা একদিন আল্লাহর রাহে দাওয়াতের কাজে ব্যয় করারও ব্যবস্থা আছে
জিকির ও ফিকিরের সঙ্গে চলা : জিকির মানে হচ্ছে আল্লাহকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখাজিকিরের তাত্পর্য হচ্ছে আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার মনোভাব জাগ্রত রাখাআর ফিকির হচ্ছে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াতাবলিগ মানুষকে উদাসীনতা পরিহার করে জিকির ও ফিকিরের সঙ্গে চলার শিক্ষা দেয়প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ইজতেমা মঞ্চে প্রায় দেড় শতাধিক যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানো হয়
ছয় উসুল (ছয়টি বুনিয়াদি শিক্ষা) : ১. কালেমা বা ঈমান ২. নামাজ ৩. ইলম বা জ্ঞান ৪. ইকরামুল মুসলেমিন বা মানুষকে সমীহ করা ৫. তাসহিহে নিয়ত ও ৬. তাবলিগ
এই ছয় অসুল কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের বিকল্প নয় বা এর মধ্যে কোনো বিতর্কও সৃষ্টি করা হয় নাইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক শিক্ষাগুলো সাধারণ মানুষের জীবনে প্রতিফলিত করার লক্ষ্যে সহজবোধ্য করে তোলার জন্য এই ছয় উসুলে বিধিবদ্ধ শিক্ষা প্রদান করা হয়উল্লেখ্য, তাবলিগ কার্যক্রমের সূচনা হয়েছিল ১৯১০ সালে২০১০ সালে পদার্পণের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রমের শত বছর পূর্ণ হলো
সারা বছর সব শ্রেণীর ধর্মপ্রাণ ও তাবলীগভক্ত মানুষ নিজ খরচে এ মেহনত ও দ্বীনের কাজে সময় দিয়ে থাকেনতাবলীগের ছোট ছোট ইজতেমা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হতে থাকেগত বছর ইজতেমার খেত্তা ছিল ৩২টিএ বছর আরও অধিকসংখ্যক মুসল্লি সমাগমের আশঙ্কায় ইজতেমা ময়দানে ৩৩ খেত্তায় উন্নীত করা হয়পুরো মাঠে ৫শটি শব্দ প্রতিধ্বনি রোধক বিশেষ ছাতা, মাইক স্থাপন করা হয়েছেপুরো ময়দান জুড়ে তৈরি করা হয়েছিল ২১০টি মুকাব্বির মঞ্চবিদ্যুত্ সরবরাহের জন্য দ্বিমুখী সংযোগ লাইন স্থাপন ছাড়াও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি জেনারেটর প্রস্তুত রাখা হয়েছে
এবারও র্যাবের ৬টি ও পুলিশের ৩টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছিলবিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে ৩৩টি খিত্তায় মুসল্লিবেশে দুজন করে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য নিয়োজিত থাকার কথা জানা গেছেইজতেমা ময়দান ও তার ১৮টি প্রবেশদ্বারসহ গুুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ৬০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়
তাবলিগের প্রাণপুরুষ মানব দরদি মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াছ (রহ.)-এর জন্ম ১৩০৩ হিজরি মোতাবেক ১৮৮৪ সালে তার বংশধররা ছিলেন দিল্লির ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বের অগ্র সেনানি১৩২৬ হিজরিতে তিনি দাওরায়ে হাদিস বা হাদিস শাস্ত্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেনকর্মজীবন শুরু হয় ১৩২৮ হিজরিতে, সাহারানপুর মাজাহিরুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়েএকাধারে প্রায় আট বছর তিনি দীনের ইলম বিতরণে কাজ করেনপিতা ও ভাইয়ের ইন্তেকালের পর মেওয়াতবাসী তাকে অনুরোধ জানানতিনি যেন মেয়াতে ফিরে যানমানুষের কল্যাণ সাধনই ছিল তার জীবনের মহান ব্রত