Monday, 3 September 2012

যেভাবে আমি সত্যকে পেলাম-৬



রেডিও তেহরান,শনিবার, ৩০ জুন ২০১২

জাপানি রমনী নাকাতা খাওলার ইসলাম গ্রহণ


ফ্রান্সে সেক্যুলার শাসন ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী সেখানে বিশ্বাসের স্বাধীনতা রয়েছে। পারিভাষিক অর্থে সেখানকার সরকার কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিগত ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা তাদের সরকার ব্যবস্থার মৌলিক একটি ভিত্তি বলে মনে করা হয়। অতএব তাদের নিজেদের দেশের মেয়েদের ওপর হিজাব ব্যবহারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা মোটেই সমীচীন নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ যদিও বলেছে যে ফ্রান্সে সর্বপ্রকার ধর্মীয় পোশাক ব্যবহারের ওপরই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তারপরও এই আইন আসলে ইসলামী হিজাবকেই টার্গেট করে করা হয়েছে। ফ্রান্সের অভ্যন্তরে হিজাবের বিস্তারে পশ্চিমারা যে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এই পদক্ষেপ তারই প্রমাণ বহন করে। কেননা ফ্রান্সের পরপরই ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ইসলামী হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এত কিছুর পরও পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর পর্যালোচনা এবং সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে প্রমাণিত হয়েছে, ইসলামকে কোনঠাসা করার লক্ষ্যে জার্মানি এবং ফ্রান্সের মতো অন্যান্য পশ্চিমা দেশে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও সেসব দেশে ইসলাম যে কোনঠাসা হয় নি তা-ই নয় বরং সেসব দেশে হিজাবের প্রতি অনুরাগ তথা ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ্য করেছে সবাই।প্যারিসে বসবাসরত নাকাতা খাওলা নামের জাপানি এক রমনী ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলমান হবার পর তিনি যখন হিজাব পরলেন তখন তিনি তাঁর অস্তিত্বে নতুন এক মূল্যবোধ ও পরিচিতি অনুভব করতে লাগলেন। হিজাবকে তিনি তাঁর উন্নয়ন ও বিকাশ এবং সমাজে নারীদের আরো বেশি উপস্থিতির সহায়ক বলে উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর ইসলাম গ্রহণের পেছনে কী কী কারণ ছিল সে সম্পর্কে বলেছেনঃ

ইসলাম গ্রহণ করার আগে ফ্রান্সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাবধারী মেয়েদের ব্যাপারে বিশেষ ধরনের আলাপ আলোচনা হতো,অবশ্য এখনো হচ্ছে।বেশিরভাগই মনে করতো ফ্রান্সের সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের ধর্মীয় ব্যাপারে নাক গলানো উচিত।আমি নিজেও অমুসলিম থাকাকালে ভাবতাম স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন ছাত্রীদের স্কার্ফ পরার মতো ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে এরকম বাড়াবাড়ি করছে।অমুসলিমরা সবসময় ভাবতো মুসলিম নারীরা ইসলামের রীতিনীতি বা ঐতিহ্যগুলোর অনুসরণ করতে বাধ্য হবার কারণেই ইসলাম পোশাক পরে।এ কারণে অমুসলিমরা ভাবতো মুসলিম নারীর হিজাব নারীদের ওপর এক ধরনের জুলুম বা অত্যাচারের শামিল, তাই হিজাব তুলে নেওয়ার মধ্যেই নারীদের স্বাধীনতা ও মুক্তি নিহিত রয়েছে বলে তারা বিবেচনা করতো। বিশ্বব্যাপী এখন অমুসলিম নারীগণ ইসলাম গ্রহণের পর উপলব্ধি করছেন যে হিজাব কতোটা যুক্তিসঙ্গত একটি ধর্মীয় প্রথা! আমি নিজেও তাদেরই একজন। আমার হিজাব আমার বর্ণগত কিংবা প্রথাগত কোনো পরিচয়ের অংশ নয় কিংবা এর কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক অর্থও নেই,আমার হিজাব একান্তই আমার ধর্মীয় পরিচয়।

আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেই, তখন একদম ভাবি নি, দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে পারবো কিনা, কিংবা নিজের হিজাব সংরক্ষণ করতে পারবো কিনা? মুসলমান হবার আগ্রহ এতো বেশি ছিল যে মুসলমান হবার পর যেসব পরিবর্তন আমার জীবনাচারে আসবে সেসব ব্যাপারে একেবারেই উদ্বেগহীন ছিলাম। ইসলাম গ্রহণ এবং হিজাব পরার ব্যাপারে মিস নাকাতা বলেনঃ প্যারিসের মসজিদে একটি বক্তৃতা শোনার পর হিজাব পরার গুরুত্বটা উপলব্ধি করলাম। মসজিদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে যে স্কার্ফটি মাথায় পরেছিলাম, মসজিদ থেকে বের হবার পরও স্কার্ফটা আর খুললাম না। ঐ বক্তৃতা আমাকে এমনভাবে আত্মিক প্রশান্তি দিয়েছিল যে ইতোপূর্বে কখনোই এমন ধরনের অনুভূতির সাথে পরিচিতই ছিলাম না। তাই স্কার্ফ ছাড়া মসজিদ থেকে বের হতে একদম মন চাচ্ছিল না। শীতের কারণে সে সময় আমার স্কার্ফের প্রতি কারো নজর পড়ে নি, তবে আমি নিজে ভীষণভাবে অনুভব করলাম যে অন্যদের সাথে আমার একটা পার্থক্য রয়েছে। সেইসাথে এক ধরনের পবিত্রতা এবং নিরাপত্তাও বোধ করলাম।

মুসলমান হবার আগে নাকাতাও হিজাবকে সীমাবদ্ধতা বলে মনে করতেন, কিন্তু এখন তিনি নিজেই হিজাব পরেন এবং এ ধরনের পোশাককে খুবই মূল্যবান এবং ইমানের পরিচয় বলে মনে করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেনঃ হিজাব পরে খুব প্রফুল্ল বোধ করতাম। হিজাব আল্লাহর আদেশের অনুসরণ এবং ইমানের দ্যুতির পরিচায়ক হিসেবে আমার কাছে সমাদৃত হয়েছিল। হিজাব করার ফলে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে সরবে উচ্চারণ করার প্রয়োজন পড়তো না, হিজাব দেখে সবাই আমার ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবেই বুঝতে পারতো। হিজাব লোকজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়-আল্লাহর অস্তিত্ব রয়েছে,আর আমাকেও স্মরণ করিয়ে দেয় সবসময় একজন মুসলমানের মতো আচরণ করতে হবে। একজন পুলিশ অফিসার তার পেশাগত ইউনিফর্ম পরে যেভাবে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করে,আমিও হিজাব পরে আমার মুসলমানিত্বের বিষয়টি অনেক বেশি উপলব্ধি করি।

মিস নাকাতা তাঁর বর্তমান জীবনকে অত্যন্ত সুন্দর বলে মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন হিজাবধারী নারী ব্যক্তিত্ব,মর্যাদা,প্রশান্তি এবং আত্মবিশ্বাসে সমৃদ্ধ। ইসলামে হিজাবের সৌন্দর্য সম্পর্কে তিনি বলেনঃ হিজাবকে অগভীর দৃষ্টিতে দেখলে কিংবা বাহ্যিক দিক থেকে দেখলে তার প্রকৃত সত্য ও বাস্তবতা সম্পর্কে জানা কঠিন হবে। যারা অসচেতনভাবে বাইরে থেকে ইসলামের দিকে তাকায় তারা হিজাবকে মনে করতে পারে সীমাবদ্ধতা আরোপের নিদর্শন হিসেবে। কিন্তু ইসলামের ভেতরে আসলে শান্তি, মুক্তি এবং আনন্দ ও স্বাদ ছাড়া আর কিছু নেই। এ আনন্দ এমন এক আনন্দ যা ইতোপূর্বে সে পায় নি। ইসলামের অনুসারীরা এই আদর্শকে সেক্যুলারিজমের তথাকথিত মুক্তির পরিবর্তে গ্রহণ করেছে। এখন প্রশ্ন জাগে ইসলাম যদি নারীদের ওপর জুলুমই করবে, তাহলে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষিত ও তরুণীরা কেন এই ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে। হিজাবধারী একজন নারী ফেরেশতার মতো সুন্দর। কিন্তু গোঁড়ামির অন্ধত্বের কারণে অন্যরা ঐ সৌন্দর্য দেখতে পায় না।

মিস নাকাতা ইসলামী হিজাবকে নারীর সৌন্দির্য বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করেন এবং এটা ইসলামের মৌলিক একটি শিক্ষা।ইসলাম সমাজের আত্মিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সমাজে বা কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে নিরাপদ ও বৈধ সম্পর্ক সৃষ্টির জন্যে বাহ্যিক ঐ পোশাক পরে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৎপরতা চালানোর শিক্ষা দিয়েছে,যাতে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment