Monday, 3 September 2012

যেভাবে আমি সত্যকে পেলাম-৫

রেডিও তেহরান, সোমবার, ১৬ জুলাই ২০১২

মার্কিন রমনী মেরিলিন হিলের ইসলাম গ্রহণ

ইসলামের অর্জনের মধ্যে রয়েছে সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিস্তার,মূর্খতা ও জুলুম অত্যাচার থেকে মানুষের মুক্তি, ইসলামী দুনিয়ায় জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও বিকাশ এবং অপরাপর জাতির কাছে সেই জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো ইত্যাদি।মানব সমাজের ওপর তাই ইসলামের ব্যাপক প্রভাবের ঐতিহাসিক প্রমাণপঞ্জি অনস্বীকার্য।মুসলিম এবং অমুসলিম এমনকি ইউরোপীয় মনীষীগণও এই সত্য স্বীকার করেছেন যে, ইসলামের নবী তাঁর মূল্যবান শিক্ষাগুলোর সাহায্যে মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আয়ারল্যান্ডের বিখ্যাত লেখক জর্জ বার্নার্ড শ নবী করিম (সা) সম্পর্কে বলেছেনঃ

"তাঁকে মানবতার ত্রাণকর্তা বলে সম্বোধন করা উচিত।আমার বিশ্বাস যদি তাঁর মতো একজন ব্যক্তি নবযুগের শাসক হতেন তাহলে তিনি সমস্যা নিরসনে শান্তি ও বন্ধুত্বের আশ্রয় নিতেন।পৃথিবীর বুকে তিনিই ছিলেন সর্বশেষ্ঠ মানব।তিনি দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন,একটি সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছেন,একটি জাতির ভিত্তি রচনা করেছেন,নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করেছেন, শক্তিশালী ও জীবন্ত একটি সমাজ সৃষ্টি করেছেন।এরকম একটি সমাজ তাঁর শিক্ষাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্যে প্রয়োজন ছিল,যেসব শিক্ষা মানবিক আচরণ ও চিন্তাজগতে সবসময়ের জন্যে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছিল। তাঁর নাম 'মুহাম্মাদ'। মুহাম্মাদ তাঁর মাত্র তেইশ বছরের নবুয়্যতিকালে মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাত করার দিকে পরিচালিত করেন।

তিনি জনগণকে গোত্রীয় দ্বন্দ্ব কলহ থেকে মুক্তি দেন এবং তাদের মাঝে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করেন।এই সময়ের মধ্যে তিনি মানুষকে যাবতীয় অশ্লীলতা ও নেশা থেকে মুক্তি দিয়ে ভারসাম্য ও মিতাচারে অভ্যস্ত করে তোলেন। সেইসাথে বেআইনী জীবনযাপন থেকে সুশৃঙ্ক্ষল জীবনযাপনের শিক্ষা দেন, ধ্বংস ও বিনাশ থেকে উন্নত নৈতিকতা ও চারিত্রিক মানদণ্ডের দিকে পরিচালিত করেন। মানবেতিহাসে ইসলামের নবীর আগে কিংবা পরে এরকম আমূল পরিবর্তন-তাও মাত্র একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে-অন্য কোথাও আর ঘটে নি। শতাব্দির পর শতাব্দি পেরিয়ে যাবার পরও ইতিহাস রচনায় নবীজীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মানুষের ইসলাম গ্রহণের অন্যতম একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। মার্কিন নওমুসলিম মেরিলিন হিল তাঁর নাম পাল্টে রেখেছেন মারিয়াম। তিনি সম্প্রতি ইসলামের সত্যাসত্য উপলব্ধি করেন এবং ইবাদাত বন্দেগির মিষ্টি স্বাদ আস্বাদন করেছেন। মেরিলিন জন্মেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন এক খ্রিষ্টান পরিবারে। তাঁর ইসলাম গ্রহণ করার নেপথ্য প্রেরণা সম্পর্কে বলেছেনঃ সবসময়ই গির্যার ওপর কর্তৃত্বপরায়নদের পরম্পরা আর অভ্যন্তরীণ বিষয় আশয়ের সাথে আমার সমস্যা ছিল।একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম গির্যায় আর যাবো না। আমি ভাবতাম লোকজন সপ্তায় কেবল একদিন গির্যায় যায়,এরপর আর দ্বীনী কোনো কাজ করে না-এটা এক ধরনের কপটতা। সেজন্যে সিদ্ধান্ত নিলাম আধ্যাত্মিকতাকে আমার জীবনে সংরক্ষণ করবো,তবে দ্বীনের আদলে নয়। তখনো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ছিল,বিশ্বাস অবশ্য সবসময়ই আমার অস্তিত্ব জুড়ে ছিল। তবে আল্লাহর আনুগত্য করার পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই পুরোটা সময় সত্যের সন্ধানে ছিলাম। এরিমাঝে এক মুসলিম নারী আমার জীবনে আসে এবং আধ্যাত্মিকতার আলোকপূর্ণ এক পৃথিবী তার সাথে নিয়ে আসে আমার জন্যে।

মেরিলিন আরো বলেনঃ একদিন সে আমার এবং আমার মায়ের বিজ্ঞাপন দপ্তরে আসে কোরআনের কিছু আয়াত একটি সাইটে দেয়ার অনুরোধ করতে। বহু ইসলামী সাইটেই কোরআনের আয়াত আছে তবে তার পরিকল্পনাটা ছিল ভিন্নরকম। সে চেয়েছিলো প্রত্যেকটি লাইনের নিচে একটা স্পেস রাখতে যাতে পাঠক কোরআনের ঐ অংশ সম্পর্কে তারঁ অভিমত লিখে রাখতে পারেন। সে প্রতিদিন আসতো একসাথে সাইটের কাজ করার জন্যে। এই সাইটের ডিজাইন করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করলাম ইসলাম কতোটা সুন্দর, কতোটা প্রেম ভালোবাসা আর বন্ধুত্বপূর্ণ। ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি মুসলমান হবো। আল্লাহর কাছে আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই এজন্যে যে তিনি এই নারীকে আমার জীবনে নিয়ে এসেছিলেন,যার ফলে আমি ইসলামের সত্য সঠিক পথের সন্ধান পেলাম।"

মারিয়ামের মাঝে এখন নবীজী সম্পর্কে এবং তাঁর আচরণ পদ্ধতি সম্পর্কে নতুন এক অনুভূতি জেগেছে। ইসলামের নবীর প্রতি তার অনুরাগ সম্পর্কে মারিয়াম বলেনঃ যখন শাহাদাতাইন-কালেমা-বলতাম,প্রতিটি শব্দ ভালোভাবে খেয়াল করতাম এবং সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করতাম যে,আল্লাহ ছাড়া আর কোনো খোদা নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) তাঁর প্রেরিত রাসূল। কিন্তু কালেমার স্বাক্ষী দেওয়ার পর যে বিষয়টি আমার জন্যে কঠোর হয়ে দেখা দিলো তাহলো আমি বুঝতে পারছিলাম না যে মুহাম্মাদ (সা) কে কেন ভালবাসতে হবে। আমি অন্য নবীকে ভালবাসতাম কিন্তু মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানতাম না। দুঃখজনকভাবে যেটুকু জানতাম তা ছিল তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক চিত্র যা ছিল পশ্চিমা সমাজে প্রচারিত তাঁর বিকৃত স্বরূপ। নবীজীর জীবনপঞ্জী পড়তে পারতাম কিন্তু এদের কেউই আমার অন্তরে তাঁর সম্পর্কে কোনোরকম অনুরক্তি জাগ্রত করে নি।

অবশেষে ইসলামের ইতিহাস এবং নবীজীর জীবনী সংক্রান্ত একটি বই আমার হাতে আসে। এ বইতে ইসলাম-পূর্ব আরবের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এবং নবীজীকে উন্নত নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ঐ বইটি কোনো মুসলমানের লেখা ছিল না, বইটি লিখেছেন একজন খ্রিষ্টান পাদ্রি। বইটি পড়ার পর আমার সামনে আলোকিত পৃথিবীর আরেকটি জানালা খুলে গেল এবং নবীজীর প্রতি আমার অনুরাগ এতো গভীর পর্যায়ে গেল যে তারপর থেকে ক্রমশ সেই ভালোবাসা বেড়েই যেতে লাগলো।" এই নবীজী সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছেঃ "যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম চরিত্রের নমুনা।"

কোরআনের বহু জায়গায় রাসূলে খোদার সর্বোত্তম চারিত্রিক ও নৈতিকতার বর্ণনা রয়েছে,বতর্মান বিশ্ব যার অভাব বোধ করছে তীব্রভাবে। বিশিষ্ট রুশ লেখক লিও টলস্টয় নবীজীকে সকল দিক থেকেই মর্যাদাময় এবং সম্মানীয় বলে মন্তব্য করেছেন। বিচার-বুদ্ধি এবং কৌশল সমৃদ্ধ বিধি বিধানের কারণে তাঁর দেওয়া ইসলামী শরিয়ত ভবিষ্যৎ বিশ্বকে জয় করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

No comments:

Post a Comment