লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১১

আখেরি নবী মুহাম্মদ সঃ এর পরে দীনের দাওয়াতের গুরু দায়িত্ব স্বাভাবিক ভাবেই এসে পড়ে উম্মতের উপর। দাওয়াতের কাজ করার কারণেই আল্লাহ তালা এই উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে ঘোষণা করেন।
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। সুরা আলে ইমরান = ১১০
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّـهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎ কর্ম করে এবং বলে আমি একজন আজ্ঞাবহ তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার? সুরা ফুসসিলাত = ৩৩
যুগে যুগে মুসলমানদের মধ্যে দীনদার পরহেজগার ওলামা মাশায়েক, আলিয়ায়ে কেরাম তাবলীগের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ভারতের রাজস্থানের মেওয়াট নামক স্থান থেকে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুসলিহে মিল্লাত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী (রহ.) তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিজেই এ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর জীবদ্দশায়ই এ মহত কার্যক্রম ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ইলিয়াছের (রহ.) মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী (রহ.) তাবলীগ জামাতের নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এ সময় শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভীও এ কার্যক্রমের প্রাণপুরুষ ছিলেন। মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.) পরবর্তী সময়ে তাবলীগ জামাতের অন্যতম আমির বা নেতা ছিলেন। বাংলাদেশে তাবলীগ জমাতের আজীবন আমির ছিলেন মাওলানা আব্দুল আজিজ (রহ.)। তিন-চার দশকের মধ্যেই তাবলীগের কার্যক্রম সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তার লাভ করে এবং ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
৬ টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর বিশেষ তাগিদ সহকারে আমল করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হলেও জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ দীনের উপর আমল করার করার প্রতি উৎসাহিত করা হয় । জোর নয়, নরম স্বভাব, উন্নত চরিত্র, মার্জিত আচরণ এর মাধ্যমে হেকমতের সহিত মানুষকে দীনের প্রতি ডাকা , সর্বোপরি সুন্নাতের উপর আমল করার মাধ্যমে আল্লাহ তালার সন্তুষ্টি অর্জন করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে। সুরা নাহাল = ১২৫
তাবলীগ জামাতের বিশেষ একটি গুণ হচ্ছে তারা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে দীনের দাওয়াতের কাজ করে। কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা নেয় না। ছওয়াল করেন, এবং ছওয়ালের ভানও করে না। কোরানের এই আয়াতের সাথে হুবহু মিলে যায় তাদের এই গুনটি। আল্লাহ তালা বলেন اتَّبِعُوا مَن لَّا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُم مُّهْتَدُونَ অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত। সুরা ইয়াছীন =২১
পরিবেশ অনুকূল হোক আর প্রতিকুল হোক বিশ্বের প্রায় সব কটি দেশেই তাবলীগের দাওয়াতি কাজ চলছে আলহামদুলিল্লাহ। এটা নিশ্চয় তাদের এখলাছের কারণে আল্লাহর বিশেষ রহমতে সম্ভব হচ্ছে। এবং তাবলীগের দাওয়াতি কাজের ফলে অমুসলিম মুসলমান হচ্ছে আর মুসলমানগণ দীনের প্রতি আরোবেশি আগ্রহী হচ্ছে। সুন্নাত মতে আমল করা শিখছে।
দাওয়াতের কাজ করা বর্তমানে কতটা জরুরী তা দেখে নিতে পারেন এই খানে
তারা বলে থাকেন ৬ টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব সহকারে আমল করতে পারলে দীনের অন্য সব বিষয়ে আমল করা সহজ হয়ে যায়।
যে বিষয় গুলির প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয় তা হল
১/ কালেমা ২/ নামাজ ৩/ এলম ও জিকির ৪/ ইকরামুল মুসলিমীন ৫/ তাসহীহে নিয়ত ৬/ তাবলীগ।
এই বিষয় গুলির প্রত্যেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১/ কালেমা। لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোনও ইলাহ নাই, মুহাম্মদ [সঃ] আল্লাহর রসুল।
কালেমা থেকে পরিপূর্ণ ঈমান বুঝানো হয়ে থাকে। তাবলীগ ওয়ালারা এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাতে শিরক থেকে বাছার জন্য এবং প্রকৃত ইমানের পরিচয় তুলে ধরার জন্য বলে থাকেন , আল্লাহ তালা ছাড়া অন্য যা কিছু আমরা দেখি বা না দেখি সব জিনিসই মাখলুখ। মাখলুখ কিছুই করতে পারে না আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া । আর আল্লাহ তালা সব কিছুই করতে পারেন মাখলুখের সাহায্য ছাড়া।
ঈমানে মুফাসসালের ঘোষণা অনুযায়ী ৭টি জিনিসের প্রতি ঈমান আনতে হয়। (১) আল্লাহ, (২) ফেরেশতাগণ (আ.), (৩) কিতাবসমূহ, (৪) রসূলগণ, (৫) আখেরাত, (৬) ভাগ্যে ভালমন্দ যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে অর্থাৎ তাকদির ও (৭) মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান। ঈমান অর্থ শুধু বিশ্বাস নয়, বরং অন্তরে বিশ্বাস, মুখে ঘোষণা এবং বাস্তবে কাজে পরিণত করার নামই হচ্ছে ঈমান।
ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে , কারো কথাকে তার বিশ্বস্ততার নিরিখে মনে - প্রাণে মেনে নেয়া । অপর দিকে রসূল ( সা: ) - এর কোন সংবাদ কেবলমাত্র রসূলের উপর বিশ্বাসবশতঃ মেনে নেয়াকে শরিয়তের পরিভাষায় ঈমান বলে । যুহাইর ইবনে হরব ( রঃ ) আবু হোরায়রা থেকে রেওয়ায়ত করেছেন , রসূলে পাক ( সা: ) এরশাদ করেছেন , ঈমানের শাখা সত্তরটির ও বেশি অথবা ষাটটির কিছু বেশি । এর সর্বোচ্চ শাখা হল লা ইলাহা ইল্লাললাহ ( অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত মাবুদ নাই ) এই কথা স্বীকার করা আর সর্বনিম্ন শাখা হল পথের উপর থেকে ক্লেশ দায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা । আর লজ্জা হল ঈমানের বিশেষ শাখা সমূহের অন্যতম । ( মুসলিম )
ঈমানের শাখা সমূহের বর্ণনা: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা , আল্লাহ পাক ব্যতিরেকে বাকী সব আল্লাহর সৃষ্ট ( মখলুক ) ও ধ্বংসশীল এ বিশ্বাস করা , সমস্ত পয়গম্বরদের প্রতি ঈমান আনয়ন , ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়ন , আল্লাহর নাযিল কৃত সমস্ত কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়ন , কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান আনয়ন , তাকদিরের প্রতি ঈমান আনয়ন , মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার উপর বিশ্বাস , জান্নাতকে বিশ্বাস করা , জাহান্নামকে বিশ্বাস করা , আল্লাহর সহিত ভালবাসা রাখা , আল্লাহর সন্তুষ্টি কল্পে কাউকে ভালবাসা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি কল্পে কারো উপর অসন্তুষ্টি হওয়া , রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের সহিত ভালবাসা রাখা , একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করা , আল্লাহর কাছে তওবা করা , আল্লাহর উপর আশা রাখা , লজ্জাশীলতা , আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা , অঙ্গীকার পূরণ করা , ধৈর্যধারণ করা , বিনয়ী হওয়া , আল্লাহর সৃষ্ট সকল মখলুকের উপর স্নেহ ও দয়া , আল্লাহর ফয়সালার উপর রাজী হওয়া , আল্লাহর উপর ভরসা করা , স্বৈরচারিতা বর্জন করা , গোস্বা পরিহার করা , কুঅভ্যাস পরিহার করা , দুনিয়ার মহব্বত পরিহার করা । কালিমা তাওহীদ পাঠ করা , কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা , ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা , ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া , দুয়া করা , যিকির করা , বেহুদা ও নিষিদ্ব কথাবার্তা হতে বেঁচে থাকা , পবিত্রতা অর্জন করা , নামাজ কায়েম করা , সদকা আদায় করা , নিজের দ্বীন রক্ষার্থে কোথা ও পালিয়ে যওয়া , ইতিকাফ করা , হজ্জ করা , মান্নত পূরন করা , কসমের প্রতি খেয়াল রাখা , কাফফারা আদায় করা , সতর ঢেকে রাখা , কুরবানী করা , ঋণ পরিশোধ করা , লেনদেনে ন্যায় - নীতি বজায় রাখা , শরীয়ত বিরোধী কাজ হতে বেচে থাকা , সত্য সাক্ষ্য দেওয়া , কাপন - দাপনের ব্যবস্হা করা , বিবাহ করে সতীত্ব অর্জন করা , পরিবার পরিজনের হক আদায় করা , মাতা - পিতার খিদমত করা ও তাদের কষ্ট না দেয়া , মনিবের অনুগত হওয়া , বিচারে ন্যায় নীতি অবলম্বন করা , মুসলিম জামাতের অনুসরণ করা , শাসকের অনুসরণ করা , মানুষের মাঝে সংশোধন করে দেওয়া , ভাল কাজে সাহায্য করা ও মন্দ কাজে সাহায্য না করা , সত্য কথা বলা , মন্দ কথা হতে নিষেধ করা , দণ্ড বিধি প্রতিষ্ঠা করা , আমানত আদায় করা , অভাবী বা বিপদের সম্মুখীনকে ধার দেওয়া , সন্তোষজনক মুআমিলা করা , প্রতিবেশীর সহিত সুন্দর ব্যবহার করা , মাল যথা স্থানে খরচ করা , সালামের জবাব দেয়া , হাঁচি দাতার জবাবে ইয়ার হামু কাল্লাহ বলা , বেহুদা খেল তামাসা হতে বেঁচে থাকা , মানুষের ক্ষতি না করা , কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা হতে অপসারণ করা ।
বাকি বিষয় গুলি পরে আলোচনা করার আশা রাখি ইনশা আল্লাহ।
No comments:
Post a Comment